ঢাকা | রবিবার
৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কীটনাশক-দূষণে কমছে দেশীয় মাছ

কীটনাশক-দূষণে কমছে দেশীয় মাছ1

আশির দশকে নেত্রকোণার মগড়া, ধনু ও কংশ নদীতে ধরা পড়তো সিলন মাছ। মাছটি আকারে ৮ থেকে ৯ ইঞ্চি লম্বা ও সাধারণত এক থেকে দেড় কেজি ওজনের হতো, ক্ষেত্র বিশেষে ওজন ৫ থেকৈ ৬ কেজিও হতো। অত্যন্ত সুস্বাদু এ মাছ পচন রোগে বিলুপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া, পিয়ালী, খুরকুটি, কাশ খররা, খোকশা, জয়া, ফলি, নাপ্তানি, চেলি, চাটুয়া, রয়না মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত

নেত্রকোণায় নদী, খাল-বিল ও ডোবা থেকে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। মৎস্য বিভাগ বলছে, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, কীটনাশকের ব্যবহার ও নদী দূষণে এসব মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। তবে কত প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে আর কত প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই মৎস্য দফতরে। এদিকে বারহাট্টা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ জানান, বর্তমানে পুকুর-জলাশয়ে চাষের মাধ্যমে বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম বেশ কিছু প্রজাতির মাছ রক্ষার চেষ্টা চলছে।

মৎস্য শিকারি, ব্যবসায়ী, মৎস্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নেত্রকোণাতে ৯৪টি বিল, ৪৯টি নদীসহ অসংখ্য খাল রয়েছে। মগড়া, কংশ, ধলাই, ধনু, সোমেশ্বরী, ধলা বিলসহ প্রায় সব নদী ও খাল-বিলেই একটা সময় প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যেতো। মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করতেন হাজারো মানুষ।
জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও বিক্রি হতো এসব মাছ। জেলার প্রায় সব নদী, খাল-বিলের নাব্যতা কমে যাওয়া, পানির প্রবাহ না থাকা, কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার, নদী দখল ও শিল্পবর্জ্য ফেলার কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণে ধ্বংস হচ্ছে মা মাছের আবাসস্থল, নষ্ট হচ্ছে মাছের বংশবিস্তার।

নেত্রকোণা শহরের মাছুয়া বাজারের মাছ ব্যবসায়ি প্রাণ কুমার বলেন, আশির দশকে নেত্রকোণার মগড়া, ধনু ও কংশ নদীতে ধরা পড়তো সিলন মাছ। মাছটি আকারে ৮ থেকে ৯ ইঞ্চি লম্বা ও সাধারণত এক থেকে দেড় কেজি ওজনের হতো, ক্ষেত্র বিশেষে ওজন ৫ থেকৈ ৬ কেজিও হতো। অত্যন্ত সুস্বাদু এ মাছ পচন রোগে বিলুপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া, পিয়ালী, খুরকুটি, কাশ খররা, খোকশা, জয়া, ফলি, নাপ্তানি, চেলি, চাটুয়া, রয়না মাছ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
নেত্রকোণা সদর উপজেলার মগড়া পাড়ের বাসিন্দা রন দাস বলেন, আগে পাঙ্গাস, গুছি, চিতল, বাঘাআইড়, খল্লা, বাছামাছ, বাতাইয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ মগড়া নদীতে পাওয়া যেতো। এখন সেসব মাছের নামও ভুলে যেতে হচ্ছে। শিল্পকারখানার নিক্ষিপ্ত বর্জ্যের কারণে পানি দূষিত হওয়া ও অভয়াশ্রম না থাকায় এসব মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দিন দিন অন্যান্য মাছও বিলুপ্ত হচ্ছে।

বারহাট্টা উপজেলার সাহতা ইউনিয়নের পাল পাড়া এলাকার জেলে দুলাল দাস বলেন, পাবদা, শিং, কৈ, মেনি, খলিশা, মলা, ঢেলা, বাইন, বেলে, টাকি, শৌল, মাগুর, গজার, পাবদা, টেংরা, কানলা মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, নাব্যতা সংকট, পোনা ও প্রজনন সক্ষম মাছ ধরাসহ পরিবেশগত কারণে খাল-বিল ও নদীতে আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না।

বারহাট্টা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মাইনুল হক কাশেম বলেন, আগে আমরা বাজারে যে পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির মাছ পেয়েছি, এখন ঠিক সেই রকম দেশীয় মাছ আর আমরা আগের মতো খুজেঁ ও পাই না। তাই দেশীয় প্রজাতির মাছ যেন আমরা আগের মতো পাই মৎস্য বিভাগ যেন সেই উদ্যোগ গ্রহণ করে। আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।

নেত্রকোণা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর বলেন, নানা কারণে সারাদেশের মতো নেত্রকোনাতে ও দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। দেশীয় মাছ রক্ষায় সরকারের নানান প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে জেলাজুড়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুকুর ও জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছের চাষ বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মেনি, শৈল, টাকি, বাইন, শিং, কই, পাবদা, গোলশা, খলিশার চাষ করা হচ্ছে। মাছের বংশবিস্তার ও রক্ষার জন্য একাধিক নদী ও বিলে অভয়াশ্রম তৈরির চেষ্টা চলছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন