ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিমা খাতে কচ্ছপগতি

বিমা খাতে কচ্ছপগতি

দেশের অন্যান্য খাতের তুলনায় বিমা খাত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। জনবল সঙ্কটকেই সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। নূন্যতম ৩০০ জনবলের বিপরীতে এ খাতে রয়েছে মাত্র ৮০ জন। জনবল সঙ্কট কাটাতে পারলে অন্যান্য খাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিমা খাতও অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করছেন এ খাতের বিশেষজ্ঞরা।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্যানুযায়ী, বিমা খাতে জীবনবিমা পলিসির সংখ্যা এক কোটির বেশি ৯ লাখের মতো। সাধারণ বিমা পলিসির সংখ্যা ২৪ লাখের বেশি। বিমাখাতে ৩ লাখ ৮৪ হাজারের বেশি প্রতিনিধি বা এজেন্ট রয়েছেন। বিমা কোম্পানিগুলোতে কাজ করেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ।

বিমাখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে রয়েছে ৬০টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রয়েছে বিশাল জনবল। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাত হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) রয়েছে আড়াইশত কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর বিমা কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইডিআরএ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে মাত্র ৮০ জন। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশিরভাগেরই চাকরি অস্থায়ী।

বিমা খাতের বয়স ৫০ বছর পেরিয়ে। খাতটিতে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে দক্ষ জনবল নিয়োগসহ সরকার সংশ্লিষ্ট সবার এগিয়ে আসা উচিৎ। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে নাম কাটাতে যাচ্ছে। এখনই খাতটির প্রতি বিশেষ নজর দেয়া দরকার।

এ বিষয়ে আইডিআরর নির্বাহী পরিচালক এসএম শাকিল আখতার বলেন, অন্যান্য খাতের তুলনায় এখানে জনবল খুবই কম। কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একজনকে একাধিক কর্মকর্তার কাজ করতে হচ্ছে। জনবল সঙ্কটে দীর্ঘ জটিলতা তৈরি হচ্ছে। চাইলেও অনেক কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা সম্ভব হয় না। ফলে গ্রাহক তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

জনবল ঘাটতি প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় জনবল জরুরি। জনবল ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। দেশের অন্যান্য সংস্থার মতো আইডিআরএ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সংস্থাটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারসের (পিডব্লিউসি) হিসাব মতে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিমা খাতের অবদান ছিল (প্রিমিয়াম আয়) মাত্র শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ। বিমা প্রিমিয়ামে মাথাপিছু ব্যয় বছরে ৯ মার্কিন ডলার (৭৭৪ টাকা), যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম। বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে ২০২০ সালে জীবনবিমা খাতে বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।

এ বছর লাইফ ফান্ড বা জীবনবিমা তহবিলের পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকায়। একই বছর নন-লাইফ বিমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। সম্পদ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকায়। বিনিয়োগ ছিল সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন