মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরে হিমাগারে শেষ মূহুর্তে কৃষকের আলু ৫ টাকা কেজি দরে বিকিকিনি হচ্ছে। এর পরেও পাইকার পাচ্ছেনা চাষি। অপরদিকে নতুন আলু সংরক্ষণের লক্ষ্যে হিমারগারগুলো এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে। বাধ্য হয়েই কৃষকের আলু লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। উপজেলার আটপাড়া এলাকায় শ্রীনগর কোল্ড ষ্টোরেজ লি. নামে একটি আলু সংরক্ষণাগারে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এর আগে শ্রীনগরে এ বছর আলু চাষের শুরুতেই টানা বৃষ্টির পানিতে কৃষকের প্রায় ৬০০ হেক্টর আলু জমি নষ্ট হয়। দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে শতশত কৃষক জমিতে পুনরায় আলুবীজ বপন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। এবারও সার্বিক পরিস্থিতিতে জমিতে আলুর আশানুরূপ ফলন ও দাম নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। এ বছর এচাষে সব খরচ বাদে জমিতে কৃষকের প্রতিমণ আলুর দর পড়বে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, হিমাগারে কয়েক হাজার আলুর বস্তা শেডে রাখা হয়েছে। আলু নিতে কোনো পাইকার আগ্রহ প্রকাশ করছেন না। এ সময় মামুন বেপারী নামে এক পাইকার বলেন, তিনি আজ ৫ টাকা কেজি দরে মাত্র ৯০ বস্তা আলু ক্রয় করছেন। ঢাকার শ্যামবাজার নেওয়ার জন্য আলু শোডিং শেষে পুনরায় বস্তাবন্দি করছেন। প্রতিকেজি আলু বাজারজাত করতে তার খরচ পড়বে দেড় টাকা। পাইকারীভাবে ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকায় বিক্রি করবেন।
স্থানীয় কৃষক রিপন বলেন, তিনি হিমাগারে ৩ হাজার ২০০ বস্তা আলু মজুদ করেছিলেন। এখন প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) আলু ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন। হিমাগার ভাড়া, আলুর দাম, লেবারসহ সব খরচ দিয়ে ১ বস্তা আলুর দাম পড়েছে ৭০০ টাকা। গেল বছর ১৬ কানি জমিতে (প্রতিকানি ১৪০ শতাংশ) আলু চাষ করেন। এচাষে প্রায় ১২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এবছর মাত্র ৫ কানিতে আলু চাষ করছি। তাও আবার বৃষ্টির কারণে একই জমিতে ২ বার বীজ বপন করতে হয়েছে। এছাড়াও স্বপন মন্ডল, আজিবর, জয়নালসহ অনেকেই জানান, আলু ন্যায্যদর না পাওয়ায় তাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। লোকসানের কারণে অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়েছেন।
জানা যায়, শ্রীনগরে আলু সংরক্ষণের জন্য ৩টি হিমাগার রয়েছে। এ অঞ্চলের কৃষকরা আলু মজুদ করেন। প্রায় কৃষকই হিমাগারের আলু লোকসানে বিক্রি করেন। স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আগাম নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা করে।
শ্রীনগর কোল্ড ষ্টোরেজ লিমিটেড’র ম্যানেজার শিশির আহম্মেদ বলেন, আলুর ন্যায্যদর না পাওয়ায় হিমাগার কর্তৃপক্ষও লোকসানের মুখে পড়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, প্রতি বস্তা আলুর ভাড়া ২১০ টাকা ও প্রতিবস্তায় তারা কৃষককে ৩০০ টাকা ঋণ দিয়েছেন। অনেক কৃষক নিজেরা আলু বিক্রি না করে মজুদকৃত আলুর দলিল অফিসে ফেলে চলে গেছেন। এ হিমাগারে ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা আলু রাখা হয়েছিল। এখন হিমাগারের ভিতরে কোনো আলু নেই। নতুন আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার চেম্বার প্রস্তুত করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সান্তনা রানী জানান, শ্রীনগর উপজেলায় এ বছর প্রায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। আলু চাষের শুরুতেই টানা বৃষ্টিতে কৃষকের বপনকৃত প্রায় ৬০০ হেক্টর আলু জমি নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা পুনরায় জমিতে আলুবীজ বপন করেন। আলু মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের অন্যতম প্রধান অর্থকারী ফসল।
আনন্দবাজার/এম.আর