উত্তরের হিমেল বাতাস আর ঘনকুয়াশা ও বরফের মত ঠাÐাপানি উপেক্ষা করে ধানের জেলা মাদারীপুরে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষক-কৃষাণীরা। ভোর হতেই শীতল বরফের মত ঠাÐাপানিতে নেমে বোরো ধানের বীজতলা আর সেই বীজতলার জমিতে সারি সারি ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষক-কৃষাণিরা। পাশাপাশি বোরো চাষের জন্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে জমি। ভোররাত থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বোরো জমিপ্রস্তুত করতে হালচাষ করছেন কৃষক।
আগাম জাতের ইরি-বোরো ধানের বীজ রোপণের হিড়িক পড়েছে। তাই ইরি-বোরো রোপণ নিয়ে যেন চলছে গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ। ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষক-কৃষাণিদের। এবার অন্য বছরের তুলনায় মাদারীপুর জেলায় তিনগুণ বেশি জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ হবে। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন, এ বছর আমন ধানের দর ভালো পাওয়ায় ইরি-বোরো ধানের আবাদ বেশি হবে। মাদারীপুরে ইরি-বোরো ধানের মধ্যে হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধান বেশি আবাদ হয়। এছাড়াও হিরা-১, হিরা-২, সোনার বাংলা, ব্রি-ধান ২৮, ব্রি-২৯, ব্রি-৮১, ব্রি-৭৪, ব্রি-৮৯সহ স্থানীয় জাতের কিছু ধান চাষ হচ্ছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ঘনকুয়াশা ঢাকা ভোর। বাড়ি সংলগ্ন জমিতে ধানের চারা তুলছেন অনেক কৃষক ও পরিবারের শিশু-কিশোররা। পুরুষেরা বস্তার মধ্যে কেউবা ভার-হাজিতে করে ধানের চারা নিয়ে মাঠে যাচ্ছেন। কেউ চাষ দেয়া জমির ঘাস পরিষ্কার করছেন। পরিষ্কার শেষে সারিতে লাগানো হচ্ছে ধানের চারা। হালকা হিমেল বাতাসে দুলছে সদ্য লাগানো ধানের চারা। দোল খাওয়া ধানের চারায় কৃষক দেখছেন আগামীর রঙিন স্বপ্ন। চারা বড় হবে, ফসলে ভরে উঠবে তার ধানের গোলা।
কৃষকরা বলছেন, আগাম চারারোপণ করায় ক্ষেতে ফসল ভালো উৎপাদন হয়। আর সারি সারি করে রোপণ করার ফলে পরিচর্যায় স্বস্তিমিলে। এছাড়াও ক্ষেতে রোগবালাই কম হওয়ায় অন্যান্য ফসল থেকে শতকরা ২০ ভাগ উৎপাদন বেশি হয়।
মাদারীপুর সদর উপজেলা ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া গ্রামের আলি আকবর জানান, এ ফসল দিয়ে পরিবারের খাবারের যোগান দিতে হয়। তাই বোরো মৌসুম এলে সময় মতো রান্না, খাবারের কথা ভুলে যেতে হয়। শুকনো খাবার চিড়া-মুড়ি খেয়ে ভোরে কাজে নামতে হয়। পরিবারের নারীরা শ্রমিকদের সাহায্য করতে মাঠে যান।
উপজেলার মাদ্রা গ্রামের জসিম হাওলাদার বলেন, বীজ-সার সবকিছুর দাম বেশি। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। সার ও বীজের দর সহনীয় হলে ধান চাষ করে আরো লাভ পাওয়া যেত। তবে এখন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে কারণ আর কয়েকদিন পর সকলেই এক সাথে ইরি বোরো ধানের বীজতলা রোপণ করতে শুরু করলে শ্রমিক সঙ্কটে পড়তে হবে।
কৃষক গিয়াসউদ্দিন বেপারী জানান, ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাÐার মধ্যে সময় মতো চারা রোপণ করতে না পারলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে না। তাই চারা রোপণ শুরু করেছি।
কৃষিবিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে শীতে বীজতলার তেমন ক্ষতি না হওয়ায় কৃষকেরা বেশ স্বস্তিতে রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এস এম সালাউদ্দিন বলেন, এখন বোরো লাগানোতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কৃষক-কৃষাণিরা। কোনো সমস্যা না হলে প্রতিহেক্টরে হাইব্রিড ৫.৮১ মে. টন এবং উচ্চ ফলনশীল ৬.২৪ মে. টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছরে আমরা ৪ হাজার কৃষকদের ১২ হাজার সার ও হাইব্রিড বীজ প্রণোদনা সহায়তা দিয়েছি। আশা করি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ভালো ফসল উৎপাদন করতে পারবো।
আনন্দবাজার/এম.আর