ঢাকা | শনিবার
১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আফ্রিকান পোকার খামার গড়লেন ইঞ্জিনিয়ার

আফ্রিকান পোকার খামার গড়লেন ইঞ্জিনিয়ার
  • মাসে আয় লাখ টাকা
  • কালো মাছির লার্ভায় মৎস্য-পোল্ট্রি খামারে বেড়েছে উৎপাদন

গাইবান্ধায় সহস্রাধিক মৎস্য ও পোল্ট্রি খামার উদ্যোক্তাদের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’। খরচ কম হওয়ায় আফ্রিকান এ পোকা চাষ করে খামারে ব্যবহার করছেন গাইবান্ধাসহ দেশের অনেকেই। পোল্ট্রি ও মৎস্যখামারে আধুনিক খাদ্য হিসাবে নতুন সংযোজন হওয়ায় লাভবান হচ্ছে খামারীরা। প্রাণিসম্পদ বিভাগের মতে, গাইবান্ধা জেলায় ১০ সহস্রাধিক হাঁস-মুরগি ও মৎস্যখামার রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বাজার থেকে চড়াদরে পোল্ট্রিফিড কিনে হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসাবে খাওয়ানো হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামধন গ্রামে প্রথমে দেখাতেই অনেকেই ভেবে বসতে পারেন এটি একটি মৌমাছির খামার। তবে এটি মৌমাছি নয়, কালো রঙ্গের এক প্রজাতির মাছির খামার। এ মাছির নাম ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই। এ খামারের মাছি থেকে লার্ভা সংগ্রহ করা। সম্প্রতি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাংগার রামধন গ্রামের জুলফিকার মামুন নামে এক ইঞ্জিনিয়ার চাকরি ছেড়ে নতুন স্বপ্নের বীজবুনতে আসেন বাড়িতে। তারপর বিদেশি একবন্ধুর কাছে পরামর্শ পেয়ে আফ্রিকা থেকে আড়াই লাখ টাকায় সংগ্রহ করেন ‘ব্লাক সোলজার ফ্লাই’ নামের পোকার লার্ভা বা বীজ। ইঞ্জিনিয়ার মামুন তার বাড়ির জমিতে গড়ে তোলেন পোকার খামার। এ লার্ভা থেকে তৈরি হয় ব্লাক সোলজার পোকা। আর এ পোকা ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন খামারে। খামারিদের কাছে এ পোকা বা লার্ভা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। চাষিরা হাঁস-মুরগি ও মাছের খামারে খাদ্য হিসাবে এ লার্ভা ব্যবহার শুরু করেন। এতে তাদের খামারের হাঁস-মুরগি ও মাছ স্বল্পসময়ে স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠে। তাই এই পোকা খামারিদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খামারিরা পোকা অথবা লার্ভা বা বীজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। জনপ্রিয়তার সঙ্গে খামারও সম্প্রসারিত হয়েছে। চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এ পোকার লার্ভা বা বীজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০০ টাকায়। মাসে তিন সহস্রাধিক খামারির কাছে বিক্রি হয় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার লার্ভা। প্রতিমাসে আয় হয় ৭৫ থেকে ১ লাখ টাকা।

ক্রেতা হারুন মিয়া বলেন, ফিডেরদরসহ অন্যান্য সামগ্রীর দর বৃদ্ধির কারণে লোকসানে পড়তে হয়  পোল্ট্রি খামারিদের। ২০২০ সালে বন্ধ করে দেই খামার। তবে চলতি বছর সুন্দরগঞ্জে ব্লাক সোলজারের খামার দেখে ইচ্ছে জাগে আবারও খামার করবো। আর কালোমাছি দিয়ে এ খাবারে চাহিদা পূরণ করবো।

সুন্দরগঞ্জের বামনডাংগা উদ্যোক্তা ইঞ্জিনিয়ার জুলফিকার আল মামুন বলেন, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই প্রথম আমি ইউটিউবে দেখি। এরপর থেকে আমার মাথায় একটা চিন্তা আসে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার পোল্ট্রি খামার আছে। প্রতিবছর অনেক খামারি ঋণের দায়ে খামার ছেড়ে পালিয়ে যায়। প্রধান সমস্যা হলো খাদ্যের দর বৃদ্ধি। চাকুরি ছেড়ে গ্রামে এসে আফ্রিকা থেকে কালোমাছি সংগ্রহ করি। পরে আমার ঘরে এ মাছি রাখি। খামার গড়ে তোলার সময় পরিবার ও স্থানীয়দের কাছে থেকে শুনতে হয়েছে নানা ধরেন কথা। খামার শুরুর তিন মাসে লার্ভা মাতৃপোকা ও জৈব সারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০০ কেজিতে। বর্তমানে খামারে মাছির রয়েছে প্রায় ১ লাখ। মাছির উৎপাদনের পাশাপাশি আবারও মুরগির খামার শুরু করি। ফিডের পরিবর্তে পোল্ট্রি খামারে খাওয়ানো হচ্ছে মাছির লার্ভা। বর্তমানে প্রতিমাসে ৭৫ থেকে একলাখ টাকা লাভ হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় খামারের লার্ভা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাসুদার রহমান সরকার বলেন, পোল্ট্রিশিল্পে ফিডের বিকল্প খাদ্য হিসেবে ব্ল্যাক সোলজার নামের মাছির খামার গড়ে তোলেন জুলফিকার রহমান মামুন নামে এক তরুণ উদ্যোক্তা। এতে তিনি লাভবান হচ্ছেন। গাইবান্ধা জেলার প্রতিটি উপজেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে এ পোকা। তাকে জেলা প্রাণিসম্পদ থেকে  সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন