দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। ওই সপ্তাহে টপটেন লেনদেন শীর্ষে উঠে আসা কোম্পানিগুলো একাই ৩৩ শতাংশ বা ২ হাজার ১৭০ টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেছে। ওই সপ্তাহে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ‘বি’ ক্যাটাগরির বেক্সিমকো একাই ৬০০ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
গেল সপ্তাহে টপটেন গেইনার তালিকায় ৭০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের অবস্থান করেছে। টপটেন লুজার করেছে ৮০ শতাংশ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া টপটেন লেনদেনে ৭০ শতাংশ ছিল ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারের দাপট লক্ষ্য করা গেছে। এদের মধ্যে টপটেন গেইনারে ২০ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরির ও ১০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি শেয়ারের অবস্থান করেছে। লুজারে ১০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি ও ১০ শতাংশ ‘জেড’ ক্যাটাগরি শেয়ারের অবস্থান করেছে। এছাড়া টপটেন লেনদেনে ২০ শতাংশ ‘বি’ ক্যাটাগরি ও ১০ শতাংশ ‘এন’ ক্যাটাগরি শেয়ারের অবস্থান করেছে। এই ধরনের চিত্রকে সবাই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হচ্ছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টারা।
ডিএসইর সূত্রমতে, গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৬ দশমিক ৮১ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৭ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ৭৭ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগের জন্য পিই রেশিও এক ঘরের সংখ্যা নিরাপদ। এই নিরাপদ সংখ্যা ১৫ পর্যন্ত ধরা যেতে পারে। তবে ১৫ সংখ্যার ঊর্ধ্বে চলে গেলে বিনিয়োগে ঝুঁকিরমাত্রা বাড়তে থাকে। ডিএসইর পিই রেশিও বর্তমানে ১৬ দশমিক ৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। সেই হিসেবে ডিএসইতে বিনিয়োগে ঝুঁকির মাত্রা নিরাপদ অবস্থানে এখনো আসেনি। ডিএসইতে বিনিয়োগ মাত্রা কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তবে আগের সপ্তাহের তুলনায় গেল সপ্তাহে বিনিয়োগ ঝুঁকির মাত্রা কমেছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো বিধায় নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। আবার যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া ‘এন’ ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
দেখা যায়, সপ্তাহ শেষে ব্যাংক খাতের ১১ দশমিক ৫২ পয়েন্টে, বিবিধ খাতের ১২ দশমিক ৪২ পয়েন্টে, টেলিযোগাযোগ খাতের ১২ দশমিক ৭৯ পয়েন্টে, বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের ১৩ দশমিক ৮২ পয়েন্টে, প্রকৌশল খাতের ১৫ দশমিক ১০ পয়েন্টে, ওষুধ রসায়ন খাতের ১৭ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে, সেবা আবাসন খাতের ২৩ দশমিক ১৮ পয়েন্টে, বীমা খাতের ২৩ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ২৭ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট, বস্ত্র খাতের ৩৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ, চামড়া খাতের ৪৬ দশমিক ১২ পয়েন্ট, পেপার খাতে ৫২ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট, সিমেন্ট খাতের ৫৯ দশমিক ৫৭ পয়েন্টে, খাদ্য আনুষঙ্গিক খাতের ৬৭ দশমিক ৪১ পয়েন্টে, সিরামিক খাতের ১০৮ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট এবং পাট নেগেটিভ ৩৫ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্টে পিই রেশিও অবস্থান করেছে।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৮৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮৬টির বা ৭৩ দশমিক ৯০ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির বাংলাদেশ শিপিং কর্রপোরেশন শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। ওই সপ্তাহের লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এ বৃদ্ধির মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন গেইনারে শীর্ষে উঠে আসে। ওই সপ্তাহে ডিএসইর লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮৬টির বা ২২ দশমিক ২২ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে।
সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির সোনালী পেপার শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে কম ছিল। ওই লেনদেন মাধ্যমে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ২০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এই কমার মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লুজারের শীর্ষে উঠে আসে। এছাড়া সপ্তাহটিতে ‘বি’ ক্যাটাগরির বেক্সিমকোর শেয়ার অর্থের পরিমানে লেনদেন শীর্ষে উঠে আসে। ওই সপ্তাহে কোম্পানিটি ৫৯৯ কোটি ৯১ লাখ ১৬ হাজার টাকা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়। এ মাধ্যমে কোম্পানিটি ডিএসইর সাপ্তাহিক টপটেন লেনদেনের শীর্ষে উঠে আসে।
ওই সপ্তাহে টপটেন গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে লাভেলো আইসক্রিম (‘এন’ ক্যাটাগরি) ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২৭ দশমিক ১৯ শতাংশ, ওয়েস্টার্ন মেরিন (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ফরচুন সুজ ২০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, বসুন্ধরা পেপার ১৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ই-জেনারেশন (‘এন’ ক্যাটাগরি) ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ, কপারটেক ১৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং পাওয়ার গ্রিড ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।
টপটেন লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটলাস (‘বি’ক্যাটাগরি) ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ, প্রান ৯ দশমিক ২০ শতাংশ, রেইনউইক যজ্ঞেশ্বর ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, লিবরা ইনফিউশন ৮ দশমিক ১২ শতাংশ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ, আইবিবিএল মুদারাবা পারপিচুয়াল বন্ড ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, বাটা সুজ ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং বিচ হ্যাচারী (‘জেড’ ক্যাটাগরি) ৬ দশমিক ১২ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।
ওই সপ্তাহে টপটেন লেনদেনে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ৩৪২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ২৭৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, পাওয়ার গ্রিড ২০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৯৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, জিএসপি ফাইন্যান্স ১১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, একটিভ ফাইন (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা, ওয়ান ব্যাংক ১১২ কোটি ৪২ লাখ টাকা, লাভেলো আইসক্রিম (‘এন’ ক্যাটাগরি) ১০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং সাইফ পাওয়ারটেক ১০৪ কোটি ৫ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়।
আনন্দবাজার/ টি এস পি