বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন করে দুয়ার খুলতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। বর্তমানে যেটি দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই উপজেলার ১৮ হাজার এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ১২ হাজার একরসহ মোট ৩০ হাজার একর জায়গায় গড়ে উঠছে এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। দ্বিতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর আরও ১৮ হাজার একর জমি যুক্ত হবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সঙ্গে।
সম্প্রতি এই শিল্প নগরীর উন্নয়ন যাত্রা শুরু করেছে। বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনের অপেক্ষায় আছে। ক্রমান্বয়ে দ্রুত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গতিকে পাল্টে দিতে যাচ্ছে। ১৫ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে এখানে। এই শিল্পনগরীর শতভাগ উন্নয়নযাত্রা পরিপূর্ণতার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল।
বেজার তথ্য মতে, প্রকল্পটি মূল অংশ মীরসরাইতে হলেও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও মীরসরাই উপজেলা এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পিত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিল্পনগর হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। শিল্পনগরকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
চট্টগ্রাম নগরীকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষার জন্য ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের সর্বপ্রথম সুপারডাইক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মেরিন ড্রাইভ রোডের সঙ্গে সুপারডাইকটিকে সংযুক্ত করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, বিজনেস হাব, সার্ভিস জোন, প্রশাসনিক/প্রাতিষ্ঠানিক এলাকা ও পুর্নবাসন এলাকা, লজিস্টিক হাবসহ প্রতিবেশবান্ধব শিল্পনগর প্রতিষ্ঠা করার জন্য সবুজ পার্ক, মাঠ এবং জলাশয়সহ প্রচুর উন্মুক্ত এলাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। শিল্পের জন্য পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে ডিস্যালাইনেশন প্ল্যান্ট, বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ঈঊঞচ স্থাপন করা হবে।
ইতোমধ্যে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে জাপানের নিপ্পন, ভারতের এশিয়ান পেইন্টস, যুক্তরাজ্যের বার্জার পেইন্টস, সিঙ্গাপুরের উইলমারসহ আরও অনেকে এবং দেশি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সব বড় শিল্প গ্রুপ রয়েছে। এ শিল্পনগরে বর্তমান ১৩টি শিল্প নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে আরও ১৫টি প্রতিষ্ঠান শিল্প নির্মাণের অংশ হিসেবে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে।
আগামী জুলাই মাস নাগাদ কমপক্ষে দুটি শিল্প কারখানা উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের মাধ্যমে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে ধারণা। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও শিল্পনগরের জন্য প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে।
তথ্যমতে, ২০১৪ সালে কাজ শুরু হয় এই প্রকল্পের। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর হবে পূর্ণাঙ্গ শিল্পশহর। এতে শিল্পকারখানার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধা থাকবে। কলকারখানার পাশাপাশি থাকবে আবাসন ও বিনোদনের ব্যবস্থা। থাকবে একটি সমুদ্রবন্দর, যেখান থেকে সহজেই চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বন্দরে পণ্য আনা-নেয়া করা যাবে।
আনন্দবাজার/শহক