ঢাকা | শুক্রবার
৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৪শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক জমিতে পরপর চারবার ফলন

এক জমিতে পরপর চারবার ফলন

সবজি চাষের এলাকা হিসেবে পরিচিত রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা ধনেপাতা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। প্রতিদিন এখান থেকে ট্রাকযোগে ধনেপাতা ঢাকায় নিয়ে যান পাইকাররা। মিঠাপুকুরে এবছর প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির চাষ হয়েছে। তার মধ্যে শুধু ধনেপাতার চাষ হয়েছে প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে।

ধনেপাতায় ধনী হওয়ার গল্প অনেক আগের। কারণ শীত মৌসুমের শুরুতে নতুন শাক-সবজিতে ধনেপাতার ঘ্রাণ না থাকলে খাওয়াটা অতৃপ্তই থেকে যায়। তাই ধনেপাতার চাষ করে অল্প সময়ে অনেক টাকা আয় করেন চাষিরা। কিন্তু এবারের গল্পটা একটু অন্যরকম। একই জমিতে একই মৌসুমে চারবার ধনেপাতার চাষ করছেন চাষিরা। কম খরচে বেশি লাভ পাওয়ায় তারা নিজেরাই এই কৌশল রপ্ত করেছেন।

মিঠাপুকুরের রানীপুকুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আঁকাবাঁকা মেঠোপথের দু’পাশে মাঝে মাঝেই চোখে পড়ছে সবুজ রংয়ের ধনেপাতার ক্ষেত। বিশেষ করে নারীরা ব্যস্ত ধনেপাতা উত্তোলনে। এ বছর ধনেপাতার ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা।

আগাম চাষকৃত প্রথম দফার ধনেপাতা অনেক আগেই উত্তোলন শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আবারো ধনেপাতা চাষ করা হয়। যা এখন উত্তোলন করা হচ্ছে। এভাবে কৃষকরা শীত মৌসুমে একই জমিতে চার দফায় ধনেপাতা চাষ করছেন। মৌসুমের আগে প্রথম দফায় আগাম চাষকৃত ধনেপাতার ক্ষেতে এসে পাইকাররা প্রতিকেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনেছেন। যদিও ভরা মৌসুমে এর দাম ক্রমান্বয়ে অনেকটা কমে আসে।

কৃষকরা জানান, রবি মৌসুমে গম, সরিষা, আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষে খরচ বেশি হলেও লাভ কম থাকে। অথচ কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায় ধনেপাতা চাষে। ৪০ দিনের ফসল ধনেপাতা একই জমিতে মৌসুমে পরপর চারবার এর চাষ করা যায়। এক বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ধনেপাতা উৎপাদন করা যায়। এতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও মৌসুমের শুরুতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ধনেপাতা বিক্রি করা যায় বলেও জানান তারা।

রানীপুকুর ইউনিয়নের দৌলত রসুলপুর গ্রামের আলী হোসেন বলেন, ‘মোর ৫ বিঘা জমি। সউগলাতে (সবগুলোতে) এবার আগাম ধুনিয়ার (ধনেপাতা) আবাদ করছু। লাভও হইছে দুই লাখ টাকার মতন।’ ধনেপাতা চাষে খরচ কম হলেও লাভ বেশি বলে জানান তিনি।

একই এলাকার সবুজ মিয়া জানান, এই এলাকায় রবি মৌসুমে শাক-সবজির আবাদ বেশি হয়। এখানকার কৃষকরা ধান-পাটের আবাদ প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। তিনি নিজেও চার বিঘা জমিতে বিভিন্ন রকমের শাকসবজি আবাদ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, ধনেপাতা চাষ কওে আমার অনেক লাভ হয়েছে। শীতকালে বাজারে স্বল্প সময়ের ফসল এই ধনেপাতার চাহিদা থাকে প্রচুর। দামও ভালো পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, এ অঞ্চলের মানুষ রবি মৌসুমে শাক-সবজির চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। একই জমিতে ধনেপাতাসহ বিভিন্নভাবে বছরে চারবার শাকসবজির চাষ করছেন তারা। এক বিঘা জমিতে ধনেপাতা চাষ করে কৃষক যে লাভ পেয়ে থাকেন অন্য কোনো ফসলে তা পান না। এছাড়া শুধু রবি মৌসুমে একই জমিতে কমপক্ষে চারবার ধনেপাতার চাষও করছেন তারা। মৌসুমকে ঘিরে অনেক রকমের শাকসবজির পাশাপাশি রংপুরে প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে আগাম ধনেপাতা চাষ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন