ঢাকা | শনিবার
২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেপরোয়া রংপুরে চট্টগ্রামে বনেদি

বেপরোয়া রংপুরে চট্টগ্রামে বনেদি

তরকারিতে ভিন্ন স্বাদ ও ঘ্রাণ এনে দেয়া ধনেপাতার বহুমুখি ব্যবহার দেশের অনেক জেলাতেই। তবে এক মৌসুমে চারবার চাষ হয় শুধু রংপুরে। ধনেপাতা বিক্রি করে এখানে অসংখ্য কৃষকের ঘুরে গেছে ভাগ্যের চাকা। পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা। তবে অন্যসব জেলার চেয়ে উত্তরাঞ্চলের রংপুর জেলায় ধনে পাতার ফলন যেমন বেশি তেমনি দামও বেশি।

বাজার অর্থনীতির সূত্রমতে, যেখানে ফলন বেশ সেখানে সরবরাহ বেশি হয়। আর সরবরাহ বেশি হলে সেখানে দামও কমে যায়। তবে ধনে পাতার ক্ষেত্রে রংপুরে অর্থনীতির এই সূত্র ব্যর্থ হয়েছে। এখানে ধনে পাতার উৎপাদন বেশি, সরবরাহও বেশি। অথচ দামে কোনো ছাড় নেই। এমনকি রাজধানী ঢাকার চেয়েও বেশি দামে এখানে ধনে পাতা বিক্রি হয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে। অনেকেই ধনে পাতার এই রহস্যময় বাজারের বেপরোয়া আচরণে বিস্মিত।

রংপুরের বাসিন্দা স্বপন চৌধুরী জানান, রংপুর বিভাগে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ধনেপাতার প্রচুর চাষ হয়। কম খরচে বেশি লাভ পাওয়া যায় ধনেপাতায়। ৪০ দিনের ফসল ধনেপাতা একই জমিতে মৌসুমে পরপর চারবার চাষ করা যায়। এক বিঘা জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ মণ ধনেপাতা উৎপাদন করা সম্ভব। এতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হলেও মৌসুমের শুরুতে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ধনেপাতা বিক্রি করা যায়। কেজি হিসেবে ২০০ হতে ২৫০ টাকা বিক্রি হয়।
অবশ্য, দেশের ৮ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ধনেপাতা চাটনি, সালাদ, তরকারি, ভর্তা জাতীয় খাবারে ব্যবহার হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও শাক হিসেবেও খাওয়া হয় ধনেপাতা। তবে এর ঔষধি গুণাগুণ বেশিরভাগ বিভাগের মানুষের কাছেই অজানা।

খুলনার মো. মিলন জানান, খুলনা জেলাতে ধনেপাতার চাষ কম হলেও যশোর, চুয়াডাঙ্গায় প্রচুর চাষ হয়। সেখান থেকে খুলনা বিভাগীয় শহর ও ঢাকায় বিক্রি হয়। ছোট মাছের চচ্চড়ি, সালাদ, বেগুনভর্তা, ডালসহ বিভিন্ন তরকারিতে ধনেপাতার ব্যবহার এখানে। মিলন বলেন, স্থানীয় বাজারে মুঠো দরে বিক্রি হয় ধনেপাতা। কেজিতে হিসাব করতে গেলে ২০০ হতে ২৫০ টাকা করে পড়বে।

সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার সাইফ উল্লাহ জানান, এখানে আঁটি হিসেবে বিক্রি হয় ধনেপাতা। তাহিরপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। প্রতি আঁটি ১০ টাকা। সে হিসেবে এখানে ২০০ টাকা কেজি। সুনাগঞ্জে ধনেপাতার চেয়ে ধনের বীজের ব্যবহার বেশি। ভর্তা জাতীয় খাবারেও ধনেপাতার উপস্থিতি রয়েছে। সাইফ উল্লাহ জানান, সুনামগঞ্জে ধনেপাতার চাহিদা কম। মানুষজন ধনের বীজটাকেই প্রধান্য দেয়। ওষুধ হিসেবে ধনেপাতার ব্যবহার মানুষ বেশি একটা জানে না।

ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনার স্থানীয়রা ধনেপাতার জন্য নির্ভর করে ময়মনসিংহ জেলার ওপর। কেননা নেত্রকোনায় এর চাষ কম হয়। সাধারণত ময়মনসিংহের গৌরিপুর থেকে সেখানে ধনেপাতার আমদানি হয়ে থাকে। তবে দামও কম সেখানে। কেজিপ্রতি হিসাব করলে ৫০ হতে ১০০ টাকা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আঁটি দরে বিক্রি।
ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল জেলার রেজাউল করিম জানান, জেলাটিতে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় ধনেপাতা। টাঙ্গাইলে যমুনা নদী থাকায় এখানে রবি শস্য বেশি চাষ হয়। এখানে বাণিজ্যিক চাষের পাশাপাশি ক্ষেতে অন্য ফসলের সঙ্গেও চাষ হয়। তা ছাড়া পাশের জেলাটি রাজধানী হওয়ায় বিক্রির হারও বেশি।

রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী স্বপন জানান, জেলায় আলুর মতো তরকারিতে শত ব্যবহার ধনেপাতার। চাটনি, গাজর, শসার সঙ্গে ধনেপাতার ব্যবহার হয়। তবে দামে কিছুটা কম। কেজি হিসেবে ১২০ টাকার মতো।

চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুরের আলমগীর হোসেন জানান, লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের চাষ বেশি। বাণিজ্যিকভাবে নারিকেল, সুপারির চাষও হয় তবে ধনেপাতা খুব কম চাষ হয়। কুমিল্লা, চট্টগ্রামের সিতাকুণ্ড থেকে লক্ষ্মীপুরে ধনেপাতার আমদানি হয়। ২০০ হতে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয় ধনেপাতা। প্রায় সব তরকারিতে ধনেপাতা ব্যবহার হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ভর্তাতে এটির উপস্থিতি রয়েছে।

তরকারিতে ঘ্রাণ আর স্বাদের জন্য ধনেপাতার ব্যবহার বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে। জেলার বাসিন্দা এম. নাজিমউদ্দিন জানান, পটুয়াখালীর মানুষ ধনেপাতার ঔষুধি গুণাগুণ বেশি একটা জানে না। কেজিপ্রতি ১৪০ টাকার মতো বিক্রি হয় এখানে।

শুধু তরকারিতে নয় ধনেপাতার রয়েছে অনেক ঔষধিগুণ। ধনেপাতায় রয়েছে ফাইবার, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন কে, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্লোরিন আর প্রোটিনও। প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে ধনেপাতা কার্যকর। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রয়েছে ধনেপাতার। হজমে সাহায্য করে। গ্যাস-অম্বল হয় না, পেট থাকে পরিষ্কার।

ফ্লোরিডা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যানুযায়ী, ধনেপাতা কিংবা বীজ রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকে। ধনেপাতা বীজের মধ্যে থাকে ইথানল, যা ব্লাড সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল থেকে ইনসুলিন নিঃসরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন