ঢাকা | রবিবার
১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস হাব চট্টগ্রাম

দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস হাব চট্টগ্রাম
  • লাখ কোটির উন্নয়ন প্রকল্প চলমান
  • বাণিজ্যিক রাজধানী ঘিরে যানজট-জলজট
  • দক্ষ জনশক্তি তৈরির ব্যবস্থা নেই
  • যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা

বিনিয়োগবান্ধব নগরী হিসেবে প্রস্তুত বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম। যেটি হবে আগামীর দক্ষিণ এশিয়ার বিজনেস হাব। এই বন্দরনগরীকে ঘিরে শুরু হয়েছে এক লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর, মিরসরাই ইকোনমিক জোন, কর্ণফুলী টানেল, কক্সবাজার রেল লাইন, চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল, পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের কাজ চলমান। তবে চট্টগ্রামকে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে সবার আগে প্রয়োজন প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড আয়োজিত এক ওয়েবিনারে গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন খাত ও সংস্থার প্রতিনিধিরা এমন মূল্যায়ন করেছেন।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, চট্টগ্রামের বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা। প্রতিবছর আমরা চট্টগ্রামবাসী ভুগে থাকি। এই জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব যেমন সিটি করপোরেশন, সিডিএরত, তেমনি জলাবদ্ধতার জন্য নাগরিকরাও দায়ী। এখানে যে ফরেন ইনভেস্টমেন্টগুলো হবে, তার জন্য যে দক্ষ জনশক্তি দরকার এবং সে দক্ষ জনশক্তির জন্য যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দরকার, তার কিছুই নেই। এজন্য প্রাইভেট সেক্টরকে এগিয়ে আসতে হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম ইজ এ কমার্শিয়াল হাব কান্ট্রি। চট্টগ্রামে যে প্রকল্পগুলো হচ্ছে সেগুলো অন টাইমে শেষ হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। বন্দরের বে টার্মিনাল, নতুন জেটি করতে হবে। এগুলো না করলে বাণিজ্য নগরীর যে সুফল তা পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রামে বিভাগীয় যে অফিস আছে সেগুলো এমপাওয়ার্ড করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা চট্টগ্রামে নিয়ে আসতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তার কবির চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষিত হয়েছে প্রায় কয়েক যুগ হয়। এখানে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে যে উন্নয়নের কথা ছিলো, প্রত্যাশা ছিলো সেটি একেবারেই হয়নি। না হওয়ার পেছনে কারণ রাষ্ট্রযন্ত্র। সমাজ চালান রাজনীতিকরা; ওই সময়ে চট্টগ্রাম থেকে যারা নেতৃত্বে ছিলেন, মন্ত্রী কিংবা জনপ্রতিনিধি, এমপি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন- এই জনপদের প্রতি কারো কোনো দায়বোধ আছে, আমরা তা খুব একটা লক্ষ্য করিনি।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামের জলজট ও যানজট নিয়ে গুণগত কোনো আলোচনা নেই। হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, কিন্তু যানজট বা আর জলজট রয়েই গেছে। এতসব আয়োজনের কোথাও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই। আমরা যানজট নিরসনে মেট্রোরেলের কথা বলছি। এটি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। অথচ এই শহরে নিয়মিত যাতায়াত করার মত ৫ থেকে ৬ হাজারের বেশি যাত্রী নেই। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মেগা খরচ হলেও মেগা লাভ নেই। ১ হাজার টাকায় যে কাজ হচ্ছে, সেটা ১ টাকায় করা যেতো।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, দুঃখের সাথে বলতে হয় যখন উন্নয়নের শিখরে যাওয়ার চিন্তা করছি, তখন নিশ্চয় একটি রোডম্যাপ ধরে আগাতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনো পরিকল্পনা নাই।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি রেজাউল করিম বলেন, উপকূলীয় শহর হিসেবে আমরা পরিবেশগত ঝুঁকিতে রয়েছি। জলবায়ু পরিবর্তন দিন দিন বাড়ছে এবং বাড়বে। চট্টগ্রামে এলার্মিং হলো এটা উপকূল ও পাহাড়ের সমন্বয়ে গঠিত। এই পাহাড়গুলো আবার বালুর পাহাড়। এখানে নদীভাঙ্গন, বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মানুষ শহরে এসে পাহাড়ে বসবাস করছে। পাহাড়ে বসবাস করতে গিয়ে এরা পাহাড় কাটছে। ফলে এই বালিগুলো বৃষ্টিতে মিশে গিয়ে বর্ষায় জলাবদ্ধতা তৈরি করছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন