চট্টগ্রামের বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ গত ১৬ ডিসেম্বর মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত সিগারেটের জাল স্ট্যাম্পের এক পণ্য চালান খালাস গ্রহণের অপচেষ্টা করে ধরা পড়ে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কাস্টমস বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা দায়ের করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এছাড়া কোম্পানিটির ব্যাংক হিসাব তলব করেছে সরকারি এ সংস্থাটি।
গতকাল সোমবার মামলা ও ব্যাংক হিসাব তলব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান। বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ চট্টগ্রামের কোতয়ালীর অন্দরকিল্লায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি ইতোপূর্বে সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েটস লিমিটেডের সহায়তায় ৭টি বিল-অব-এন্ট্রিতে ‘এ-৪ পেপার’ ঘোষণায় পণ্য খালাস করে।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর ওই ঘটনায় ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি তদন্তের জন্যে যুগ্মপরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট এক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যরা হলেন- মুনাওয়ার মুরসালীন (উপ-পরিচালক), আলমগীর হুসেন (সহকারী পরিচালক), মাশরেকী ইলিয়া কাজান (সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা) এবং আব্দুল আউয়াল (সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা)। মইনুল খান বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় আমদানিকৃত সিগারেটের জাল স্ট্যাম্পের ওই পণ্য চালানটি খালাস নেয়া সম্ভব হলে সরকারের প্রায় ১৩০ কোটি রাজস্ব হানি হতো।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ ইতোপূর্বেও সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েটস লিমিটেডের সহায়তায় ৭টি বিল-অব-এন্ট্রিতে ‘এ-৪ পেপার’ ঘোষণায় পণ্য খালাস করেছে। সন্দেহ হচ্ছে, ওই প্রতিষ্ঠানটি ওইসব চালানেও একইরূপ জাল ব্যান্ডরোল খালাস করেছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে। তাই গঠিত তদন্ত কমিটি কোন কোন সিগারেট ফ্যাক্টরি ব্যান্ডরোল ব্যবহারের মাধ্যমে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে তা অনুসন্ধান করবে।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সিগারেট খাত থেকে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট রাজস্ব আহরণ করে। সিগারেট ফ্যাক্টরি থেকে বাজারজাতকরণের প্রাক্কালে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ব্যান্ডরোল প্রতিটি সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের বিশেষ টিম মিথ্যা ঘোষণায় ‘এ-৪ পেপার’ঘোষণায় জাল ব্যান্ডরোল খালাসকালে আমদানিকারক বাপ্পু এন্টারপ্রাইজের এক পণ্য চালান আটক করে। চালানটি চীন হতে আমদানি করা হয়।
গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানটির মূসক নিবন্ধন ফর্ম-২.১ এ উল্লিখিত ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির নামে বা কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যাংকের তথ্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনুরোধ করেছে।
এছাড়া ওই কমিটি কর্তৃক অনুরূপ চট্টগ্রামের কোতয়ালির জুবলী রোর্ডের কাদের টাওয়ারের (চতুর্থ তলা) অন্য আরেক প্রতিষ্ঠান আরাফাত এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে একই কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ওই প্রতিষ্ঠানটিও বিগত সময়ে একই সিএন্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েটস লিমিটেডের সহায়তায় ৬টি বিল-অব-এন্ট্রিতে ‘এ-৪ পেপার’ঘোষণায় পণ্য খালাস গ্রহণ করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটির সার্বিক তথ্য পর্যালোচনা করে শিগগিরই ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি প্রদানে প্রচেষ্টায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
আনন্দবাজার/শহক