ঢাকা | বুধবার
১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিনামূল্যের বীজ-সার থেকে বঞ্চিত চাষীরা

বিনামূল্যের বীজ-সার থেকে বঞ্চিত চাষীরা

নীলফামারীর ডিমলায় রবি মৌসুমে সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যের বীজ ও সার বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রকৃত কৃষকরা সরকারিভাবে দেওয়া বিনামূল্যের বীজ ও সার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

জানা যায়, ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২০২০-২১ রবি মৌসুমে সরকারি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। গত রবিবার উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নে ৯৪ জন কৃষকের মাঝে ২০ কেজি গমের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও এমওপি সার বিতরণ করা হয়। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রকৃত কৃষকদের অনেকেই সার ও বীজ পায়নি। তালিকায় যেসব কৃষকের নাম ও মোবাইল নম্বর আছে, তার অধিকাংশই ভুয়া ও অব্যবহৃত। তালিকায় থাকা অধিকাংশ কৃষকের মোবাইল নাম্বারের সঙ্গে নামের কোনো মিল নেই। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে সরকারের দেয়া উন্নতমানের বীজ ও সার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রণোদনার তালিকাতে ৩০ জন কৃষকের নাম রয়েছে। তবে তালিকায় নাম থাকাদের মধ্যে কেউই কৃষি প্রণোদনার সার ও বীজ পায়নি। এমনকি তালিকায় নাম থাকার বিষয়টিও তারা জানে না। তালিকায় থাকা কৃষকদের নামের পাশের ২০টি মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে জানা যায়, তারা কেউই সার-বীজ পায় নি। অনেকে আবার এ উপজেলার বাসিন্দা নয়।

তালিকাভুক্ত কৃষক ঠাকুরগঞ্জ গ্রামের রশিদুলের নম্বরে ফোন দিয়ে জানা যায়, তিনি কোনো সার ও বীজ পাননি। কৃষক পিয়ারুলের নাম্বারে ফোন দিলে ফোনের অপরপ্রান্তের ব্যক্তি বলেন, এটা আমার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বার। আমার বাড়ি ঢাকা। পিয়ারুল নামে আমি কাউকে চিনিনা। ডিমলা উপজেলা কোথায় আমি সেটাও জানিনা।

আরেক তালিকাভুক্ত কৃষক মফিদুলের নাম্বারে ফোন দিলে বরিশালের এক ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে বলেন, মফিদুল নামে তিনি কাউকে চিনেন না। এভাবে তালিকায় থাকা অনেক কৃষকের নামের পাশে থাকা মোবাইল নাম্বার এ ফোন দিয়ে জানা যায়, তালিকাভুক্তদের অনেকে উপজেলার বাসিন্দাই নয়। অধিকাংশ ব্যক্তির ফোন নাম্বার অব্যবহৃত ও ভুল।
স্থানীয়দের অভিযোগ তালিকায় থাকা ৫ থেকে ৭ জন বাদে বাকিরা কেউ সরকারি প্রণোদনার সার ও বীজ পায়নি। অভিযোগের বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা লোহানি শাহনেওয়াজ বলেন, সার-বীজ বিতরণে স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের সহযোগিতায় তালিকা করা হয়েছে। আর সে অনুযায়ী বিতরণ করা হয়েছে। অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। এখন তদন্ত করে প্রকৃত কৃষকের হাতে প্রনোদনার সার-বীজ দেওয়া হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার সেকেন্দার আলি বলেন, সরকারি প্রণোদনার এ মালামাল বিএডিসি আমাদের সরবরাহ করেনি। আমি শুধু সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে দায়িত্বরত সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বিতরণের অনুমোদন দিয়েছি। অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রণোদনার সার-বীজ বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন