রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, বিগ্রেড, বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ। সারি সারি দোকান। চলছে হাঁকডাক, দরদাম। এক কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি ওজনের মাছ। লোকজনও উৎসাহ নিয়ে দেখছেন, আবার কেউ কিনছেন। বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারে নবান্ন উৎসব ঘিরে এ মাছের মেলা বসে।
এ দিনটির জন্য পুরো বছর অপেক্ষায় থাকেন কালাই উপজেলাবাসি। পঞ্জিকা অনুসারে পহেলা অগ্রহায়ণে বসে এ মাছের মেলা। অগ্রহায়ণ মাসে কিছুটা ঠান্ডা হলেও মেলাজুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতা আর কৌতূহলী মানুষের ঢল। মেলায় নদী, দীঘি ও পুকুরে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা টাটকা মাছ কিনতে ক্রেতারা ও পাইকাররা ভিড় জমায়।
এ অগ্রহায়ণ মাসে মাঠ থেকে নতুন ফসল কৃষকদের ঘরে উঠলেই নবান্ন উৎসবের আয়োজন করেন। নবান্ন উৎসবে প্রতিবছর এখানে মাছের মেলা বসে। মেলায় অংশ নেয় উপজেলার মাত্রাই, হাতিয়র, মাদারপুর, হাটশর, হারুঞ্জ, পুনট, বেগুনগ্রাম, পাঁচগ্রামসহ ২৫ থেকে ৩০ গ্রামের মানুষ। এ উৎসবের প্রতি বাড়িতে মেয়ে জামাইসহ স্বজনদের আগে থেকে দাওয়াত দেয়া হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ মেলায় আসে।
মেলায় বিশালাকৃতির একটি মাছ মাথার ওপর তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছিলেন কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের মাছ বিক্রেতা গোলাম রব্বানী। তিনি ১৫ কেজি ওজনের সিলভার মাছটির দাম হাঁকেন ১২ হাজার টাকা। ২৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিগ্রেড ও সিলভার কার্প মাছ বেশি বিক্রি হয়েছে। রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে।
ক্রেতা বেলাল হোসেন, অমিত মন্ডল, মনোয়ার হোসেন জানান, এবারের মেলায় প্রচুর মাছ উঠেছে। দাম একটু বেশি। মাছ ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন, তাজুল ইসলাম, মোরশেদুল ইসলাম জানান, মাছের মেলায় প্রচুর লোক সমাগম হলেও বেচাকেনা সেই তুলনায় কম। তারপরও যেটুকু বেচাকেনা হয়েছে, সব খরচ বাদে তাতে লাভ টিকবে।
মাছ চাষি মহাতাব তালুকদার, মেলা সামনে রেখে এক বছর ধরে পুকুরে বড় বড় মাছ বাছাই করে চাষ করেছেন। তাই এবার পাঁচশিরা বাজারের মাছের মেলায় বড় বড় মাছ বিক্রি করতে পারছেন।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টুকটুক তালুকদার বলেন, দেশীয় জাতের মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। মেলা উপলক্ষে এ জাতের মাছগুলো চাষিরা চাষ করায় এ জাতগুলো আবার ফিরে এসেছে। আমরা অতিথিপরায়ণ জাতি। নবান্ন উৎসব উপলক্ষে আত্মীয়দের মধ্যে পারস্পরিক মিলনমেলার সুযোগ ঘটে, এটা ভালো দিক।
আনন্দবাজার/শহক