ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেলাপিয়ার নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন, ওজন হবে আড়াই কেজি

তেলাপিয়া মাছ

নতুন এক তেলাপিয়ার প্রজাতি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। এ প্রজাতির তেলাপিয়া মাছ সর্বোচ্চ আড়াই কেজি ওজনও হবে। দেখতে যেমন বাহারি, তেমনি খেতেও অনেক সুস্বাদু।

বিএফআরআই দেশে মোট মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, তারই ফল হিসেবে উদ্ভাবিত হয়েছে এই নতুন প্রজাতি। ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু জমির পরিমাণ বাড়ছে না।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, অতি আহরণ, জলাশয় সংকোচনের কারণে মাছ উৎপাদনে ভাটা পড়ছে। এ সমস্যা মোকাবিলার জন্য মাছের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করছে বিএফআরআই। যেন স্বল্প সময়ে ও স্বল্প জায়গা ব্যবহার করে অধিক মাছ উৎপাদন করা যায়।

বিএফআরআইয়ের তথ্য মতে, দেশে বছরে মাছের উৎপাদন ৪৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে তেলাপিয়া চাষ হয় তিন লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। মোট মাছের উৎপাদন দ্বিগুণ করে ২০৪১ সালে ৯০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করতে চায় বিএফআরআই। এ লক্ষ্যে বাজারে প্রচলিত ও চাহিদাসম্পন্ন কয়েকটি মাছের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই অংশ হিসেবে তেলাপিয়ার এই ১৩তম প্রজাতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

গবেষণার বিষয়ে ইনস্টিটিউটের গবেষকরা বলছেন, ময়মনসিংহে বিএফআরআইয়ের পুকুরে মাছের নতুন প্রজাতি উদ্ভাবনের কার্যক্রম চলছে। তেলাপিয়ার জার্মপ্লাজমা সংরক্ষণ এবং জেনেটিক সিলেকশন পদ্ধতিতে আরও উন্নত প্রজাতি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জেনেটিক গবেষণায় ফ্যামিলি সিলেকশন প্রটোকল অনুসরণ করে উচ্চ ফলনশীল গিফট তেলাপিয়ার ১৩তম প্রজাতি উদ্ভাবন করেন, যা প্রচলিত তেলাপিয়ার চেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ও ৬২ শতাংশ বেশি উৎপাদনশীল। পুকুরে মাত্র ছয় মাসেই ৬০০ গ্রাম ওজন হয় এই জাতের। এই প্রজাতি প্রচলিত রঙের পাশাপাশি লাল-সাদাও হয়। খেতেও বেশ সুস্বাদু।

নতুন প্রজাতির তেলাপিয়ার রোগ প্রতিরোগ ক্ষমতা বেশি। বাঁচার হার মূল জাতের তেলাপিয়ার তুলনায় বেশি। উপকূলীয় জলাশয়েও চাষোপযোগী। প্রধান খাবার খইল, ভুসি ও গমের কুড়া। বর্তমানে মূল জাতের তেলাপিয়ার হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ৯ হাজার কেজি। অন্যদিকে নতুন জাতের তেলাপিয়ার উৎপাদন হবে হেক্টরপ্রতি ১৩ হাজার কেজি।

অধিক ফলনশীল এ প্রজাতি চাষের মাধ্যমে তেলাপিয়া দুই লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন করা যাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।

তেলাপিয়ার নতুন প্রজাতি উদ্ভাবন প্রসঙ্গে ড. ইয়াহিয়া বলেন, আমরা তেলাপিয়া, সাদা পাঙ্গাশ, সরপুঁটি নিয়েও গবেষণা করছি। তেলাপিয়ার ১৩তম প্রজাতি উদ্ভাবিত হয়েছে। মূল প্রজাতির চেয়ে যা ৬২ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল। তেলাপিয়া নিয়ে আমরা বিশ্বে গর্ব করতে পারি। তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ। তেলাপিয়া উৎপাদন প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন। এটা সাধারণ ভোক্তাদের মাছ। সাধারণ ভোক্তা এই মাছ খেতে পছন্দ করেন। স্বল্পমূল্যে এই মাছ বাজারে পাওয়া যায়। আমাদের কাছে এখন যে তেলাপিয়া আছে (নতুন প্রজাতি) প্রতিটার ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি।

আনন্দবাজার/এম.আর

সংবাদটি শেয়ার করুন