- প্রযুক্তি হাব হিসেবে ভ্যালির আধিপত্য কমছে
- টেক জায়ান্টদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান
- বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি হতে পারে দ্বিতীয় সিলিকন ভ্যালি
যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকো ও স্যান হোস জুড়ে বিস্তৃত সিলিকন ভ্যালি তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্বের রাজধানী হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব অর্থনীতি, শেয়ারবাজার ও সংস্কৃতিতে সিলিকন ভ্যালির অবদান অনেক। বিগত ১৯৯৫ সালের পর সিলিকন ভ্যালি হয়ে উঠে ইন্টারনেট অর্থনীতি এবং উচ্চ প্রযুক্তি সংক্রান্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র। বিশ্বের বড় বড় সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিকস পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই এখানে অবস্থিত। এই ভ্যালিতেই বিশ্বের সবচেয়ে দামি পাঁচটি জায়ান্ট টেক কোম্পানি ব্যবসা করছে। বিশ্বখ্যাত ভেঞ্চরগুলোর দুই তৃতীয়াংশ আসে সিলিকন ভ্যালি থেকে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোথাও সিলিকন ভ্যালির প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হয়নি।
তবে ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি হাব হিসেবে সিলিকন ভ্যালির আধিপত্য এখন কমতে শুরু করেছে। আসতে শুরু করেছে ব্যাপক পরিবর্তন। শুধু গেল বছরেই সানফ্রান্সিসকোতে যত মার্কিন নাগরিক এসেছেন, এই এলাকা ছেড়েছেন তার চেয়েও বেশি। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিলো ৩৪ শতাংশ। সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, আগামী বছরের মধ্যে ৪৬ শতাংশ মানুষ এ অঞ্চল ত্যাগ করবে।
বিশ্বের বড় বড় সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিকস পণ্যনির্মাতা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই রয়েছে একসময়ের স্টার্টআপ বা উদ্যোগের এ স্বপ্নভূমিতে। এখানেই জন্ম হয়েছে অ্যাপল কম্পিউটারস ইনকরপোরেটেড, ফেসবুক, গুগল নেটফ্লিক্সের। এ তালিকায় রয়েছে টুইটার, ইউটিউব, ইয়াহু, উবার, অ্যাডব, ইবে, সিসকো, পেপ্যাল, ইন্টেল, এইচপি এবং প্যান্ডোরাও। তবে উচ্চ শুল্ক, আবাসন ও কার্যালয় ভবনের বেশি খরচ এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, সিনথেটিক বায়োলজির মতো নানা নতুন প্রযুক্তি ও অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোগের ক্ষেত্রে মুনাফা কম হওয়ায় সিলিকন ভ্যালির পরিবর্তে অন্যান্য শহরকে বেছে নিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। যেখানে খরচ তুলনামূলকভাবে কম আর ব্যবসায়িক সুবিধা বেশি তারা সেখানেই ছুটছেন।
মূলত, প্রযুক্তি হাব হিসেবে সিলিকন ভ্যালির আধিপত্য গেল কয়েক বছর ধরেই হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৩ সালে ভ্যালির উপকূলীয় এলাকায় যে বিনিয়োগ করা হতো, তা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এছাড়া চীনভিত্তিক বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও কারখানা স্থানান্তর করছে। আর এতেই সম্ভাবনা দেখছে বাংলাদেশ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ বলছে, সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহেমদ পলক সিলিকন ভ্যালিতে ইন্টেল ও ম্যাকসকেন ভেঞ্চারের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করে তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিনিয়োগের আকর্ষণীয় এবং উপযুক্ত স্থান হতে পারে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি। যদি টেক জায়ান্টদের আকৃষ্ট করা যায় তাহলে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি হয়ে উঠবে দ্বিতীয় সিলিকন ভ্যালি।
গাজীপুরে অবস্থিত ‘বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি’ দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ হাই-টেক পার্ক। এখানে ৩৫৫ একর জমিতে স্থাপিত পার্কে বর্তমানে ৫৮টি কোম্পানিকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে ১৬টি কোম্পানি উৎপাদন শুরু করেছে। কোম্পানিগুলো এই পার্কে মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বলিং ও উৎপাদন, অপটিকাল ক্যাবল, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ডাটা সেন্টারের মতো উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কালিয়াকৈরে ৩৩৫ একর জমির ওপর হাইটেক সিটি বাস্তবায়িত হচ্ছে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে। পার্কটিকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করে প্রশাসনিক ভবন, হাসপাতাল, কাস্টম হাউস, স্কুল-কলেজ, ব্যাংক, শপিং মল, আবাসিক এলাকা, শিল্প এলাকা, কনভেনশন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। সহজ যোগাযোগ নিশ্চিত করতে একটি রেলস্টেশন স্থাপন ও শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে ৪৮টি কোম্পানিকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে এরই মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে ১৪টি কম্পানি। কর্মসংস্থান হয়েছে সাত হাজার ৮৮৯ জনের। বিনিয়োগকারীদের জায়গা দিতে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির পাশেই গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি-২। প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে।
করোনা মহামারির ভয়াবহতার মধ্যেই এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে ১৭টি কোম্পানির কাছ থেকে ৬৬১ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে ওয়ালটন, র্যাংগস, ফেয়ার ইলেকট্রনিকস, ভিশন, কেডিএস, নাজডাক টেকনোলজিস, এলিয়ন ইন্টারন্যাশনাল, বিজনেস অটোমেশন, জেআর এন্টারপ্রাইজ ও বিজেআইটি। এসব কোম্পানি মোবাইল ফোন সংযোজন ও উৎপাদন, অপটিক্যাল কেবল, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ডাটা সেন্টারসহ উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি কর্তৃপক্ষ জানায়, সিটিতে এ পর্যন্ত মোট ৭০টি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদের মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ১২০ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ হবে ১২৬৪.৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ৪০টি প্রতিষ্ঠান এখানে বিনিয়োগ করেছে। ওরি বায়োটেক লিমিটেড বিনিয়োগ করবে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সিলিকন ভ্যালি হলো ৩০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত একটি জায়াগা সানফ্রান্সিসকো ও স্যান হোস শহরের মাঝামাঝি উত্তর ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত।
আনন্দবাজার/শহক