ঢাকা | রবিবার
২৬শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পটল বেচে সুলতানের আয় লাখ টাকা

পটল বেঁচে

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক সুলতান হাসান তারা। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি পটল চাষ করে আসছেন। চলতি মৌসুমে তিনি ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে বসতবাড়ি সংলগ্ন ৩৫ শতক জমিতে পটলের চাষ করেছেন। পটলের ফলনও ভালো হয়েছে।

এক সময় সুলতানের সংসারে ছিল সীমাহীন অভাব-অনটন। সেই অভাব থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘদিন ধরে পটল ক্ষেতে শ্রম দিয়ে আসছেন তিনি। তার শ্রম বিফলে যায়নি। পটল বিক্রির টাকায় তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। পটল চাষ করে তিনি তার ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। পটল বিক্রির টাকায় জায়গা কিনেছেন। বাড়ি ঘর তৈরী করেছেন।

চাষি সুলতান হাসান তারা জানান, পটল চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। তিনি ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৫ শতক জমিতে পটলের চাষ করেছেন। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত তিনি ১২০ মন পটল উত্তোলন করে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পাইকারি বিক্রি করেছেন। প্রথমে বাজার দর কম থাকায় প্রতিমন ৪০০ টাকা দরে ৫০ মন পটল বিক্রি করলেও বর্তমানে বাজার দর ভালো যাওয়ায় প্রতি মন ১ হাজার ২০০ টাকা দরে আরও ৭০ মন পটল বিক্রি করেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও বর্তমান বাজার দর অব্যাহত থাকলে ১ লাখ টাকারও বেশি আয় হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া এলাকাটি উঁচু হওয়ায় সেখানে বন্যার পানি প্রবেশ করেনা। জমির মাটি উর্বর হওয়ায় ক্ষেতের ফলন ভালো হয়। এতে করে কোন মৌসুমে পটল চাষ করে তাকে লোকসান গুণতে হয়নি।

সুলতান আরও বলেন, এক সময় তার সংসারে অভাব অনটন ছিল। দিনমজুর পিতার সামান্য আয়ে পরিবারের সদস্যের তিন বেলা আহার জোটানো ছিল খুবই কষ্ট সাধ্য। উপায় না পেয়ে সেই কিশোর বয়সেই বাবার সঙ্গে কৃষি জমিতে কাজ শুরু করেন তিনি। অনান্য সবজির পাশাপাশি প্রথম পটল চাষ করেই লাভবান হই। সেই পটল চাষে লাভের নেশা আর ছাড়তে পারিনি। সেই থেকেই প্রতি বছর পটল চাষ করে আসছি। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। পটল বিক্রির টাকায় বাড়ি করার পাশাপাশি ৬ শতক জায়গা কিনেছি।

পটল চাষি সুলতান হাসান তারার বৃদ্ধ পিতা হাবিবুর রহমান বলেন, আমার অস্বচ্ছল সংসারে ছেলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। বৃদ্ধ বয়সে এখন শুধু নামাজ কালাম পড়ি আর ছেলের সাথে পটল ক্ষেতে যতটুকু সম্ভব হয় কাজ করি। পটল চাষে ছেলের সফলতা দেখে খুবই আনন্দ লাগে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামার বাড়ি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলার ৭ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমির শাকসবজি।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, সদর উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে শাকসবজী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ২০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজির চাষ হয়েছে। তারমধ্যে ৬৫ হেক্টর জমিতে পটোলের চাষ হয়েছে। পটোল চাষে খরচ কম লাভ বেশি। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের জমি উচু ও মাটি উর্বর হওয়ায় এলাকায় পটোলের ফলন ভালো হয়। সারাবছর ধরেই পটোলের কম-বেশি পাওয়া যায়। পটোল চাষ করে সদর উপজেলার অনেক কৃষকই স্বাবলম্বী হয়েছেন।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন