ঢাকা | শনিবার
২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বে দুর্যোগ বেড়েছে ৩ গুণ, হুমকিতে কৃষিভিত্তিক জীবিকা

এই মুহূর্তে করোনা মহামারি, বন্যা, খরা, দাবানল, পঙ্গপালের হানাসহ নানা ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক প্রতিবেদন বলছে, গত শতকের সত্তর ও আশির দশকের তুলনায় এখন তিন গুণ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে মানুষ। এসব দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি খাত ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জীবিকা। বিঘ্নিত হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা। বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ছে দরিদ্ররা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড–১৯ মহামারির মধ্যে গত বছর বিরূপ আবহাওয়া, দাবানল ও পঙ্গপালের আক্রমণের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষিজাত খাদ্য ব্যবস্থা যে মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনটি ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি। এত দ্রুত, তীব্র ও জটিল আকারে এ রকম দুর্যোগ আগে দেখা যায়নি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাবের ৬৩ শতাংশই কৃষি খাতের ওপর পড়ছে। বিপর্যস্ত হচ্ছে কৃষিভিত্তিক জীবিকা। গৃহস্থালি থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত তার প্রভাব পড়ছে। প্রজন্মের পর প্রজন্মকে এর জন্য ভুগতে হতে পারে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে স্বল্পোন্নত এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলো। প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে শস্য ও প্রাণিসম্পদ নষ্ট হয়েছে ১০৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এশিয়া। চার হাজার ৯০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে তাদের। এরপর আফ্রিকায় তিন হাজার কোটি ডলার এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে দুই হাজার ৯০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি উৎপাদন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে খরায়। ক্ষতির অন্য কারণগুলো বন্যা, ঝড়, কীটপতঙ্গ ও রোগবালাই এবং দাবানল। নির্দিষ্ট মৌসুমে ঠিকঠাক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় শস্য ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদন ৩৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর জীববৈচিত্র্যের বিপর্যয়ে ক্ষতি হয়েছে ৯ শতাংশ। কোভিড–১৯ মহামারি বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিতে এর ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে। প্রথমবারের মতো এফএও–এর প্রতিবেদনে অর্থনৈতিক ক্ষতিকে ক্যালরি ও পুষ্টিতে রূপান্তর করে দেখানো হয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে শস্য ও প্রাণিসম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বছরে ৬ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন কিলোক্যালরি হারানোর সমান। এটা ৭০ লাখ মানুষের বছরে গৃহীত ক্যালরির সমান।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষির ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বিরূপ পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার সক্ষমতা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোয় বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন