জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অসাধারণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও রাশিয়ার সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে অভিহিত করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি ল্যাভরভ। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকায় প্যারেড স্কয়ারে মুজিব চিরন্তন অনুষ্ঠানে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়া আমার জন্য সম্মানের বিষয়। রাশিয়া শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন অসাধারণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনগণের স্বাধীনতার জন্য নিবেদিত সংগ্রামী এবং আমাদের দেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে স্মরণ করে।’
তিনি বলেন, প্রথম বাংলাদেশি কোনো শীর্ষ নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি সফরে মস্কোতে এসেছিলেন ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে। সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ওই সফর হয়েছিল। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে সাম্য, সম্মান এবং পারস্পরিক স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার নীতি তখনই প্রতিষ্ঠিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) বাংলার জনগণ নিজের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারের জন্য চড়া মূল্য দিয়েছে। আমাদের দেশ রাজনৈতিক সমর্থন ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে সহযোগিতা দিয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে তৎকালীন ইউএসএসআর নৌবাহিনীর ১২ বিশেষ কম্পানিকে চট্টগ্রাম বন্দরে মাইন ও ডুবে যাওয়া জাহাজ সরাতে মোতায়েন করে।’
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সোভিয়েত নৌবাহিনীর সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে গেছে। অর্ধশতক আগের সেই ঘটনাও আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুরা মনে রেখেছে। আমাদের অভিন্ন ইতিহাসের এমন সযতœ স্মরণ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’
বাংলাদেশের অব্যাহত সাফল্যের প্রশংসা করে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, ‘বাংলাদেশ সুসংহতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নতি করছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো সুনাম আছে বাংলাদেশের। জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে লড়ছে। জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে সংঘাতময় অঞ্চলগুলোতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে।’
ল্যাভরভ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার। গত বছর করোনাভাইরাস মহামারি সত্ত্বেও দুই দেশের বাণিজ্য প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। এটি এখন ২.৪ ডলারের কাছাকাছি, যা সর্বকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে রাশিয়ার সহায়তায় নির্মাণাধীন এ দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নে অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন। আগামী ২০২৩-২৪ সাল নাগাদ এটি পুরোপুরি কার্যকর হবে বলে আশা করে তিনি বলেন, এটি স্থানীয় জ্বালানি খাতে নতুন মাত্রা আনবে।
তিনি বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় রাজনৈতিক আলোচনা এবং পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতেও রাশিয়া প্রস্তুত। আমি নিশ্চিত যে বিদ্যমান সহযোগিতামূলক সম্পর্কে দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে।’
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের শান্তি, মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
এদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব গ্রাজুয়েটস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস পিপলসের ‘কাউন্সিল চেয়ারম্যান’ ও রাশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি আলমগীর জলিল এ প্রসঙ্গে বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রুশ-বাংলাদেশ উষ্ণ সম্পর্কের বিষয়টিই ফুটে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডায়নামিক নেতৃত্বের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছি।