নওগাঁর সাপাহারে সারা বছর ধরে জমজমাট ভাবে চলছে আম সহ বিভিন্ন ফলদ ও ঔষধী চারাগাছ বেচাকেনার হাট। উপজেলা সদরের টিএন্ডটি মোড় এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই চারার হাটে সারাক্ষণ ব্যাস্তমূখর পরিবেশে চলছে চারা ক্রয়-বিক্রয়ের কার্যক্রম। যাতে করে এই চারাহাট এ উপজেলার অর্থনিতীতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন সচেতনরা।
স্থানীয় চারা ব্যাবসায়ীরা জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা সহ সাপাহার ও তার আশে পাশের উপজেলার নার্সারি মালিকগণ তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ এই হাটে সারা বছর ধরে বেচাকেনা করছেন। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া ও নওগাঁ জেলা থেকে চারা ব্যবসায়ীরা ট্রাকে করে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার চারা গাছ এই হাটে এনে বিক্রি করেন। এখানে বিদেশি প্রজাতির আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস, মেহগনি সহ দেশি বিদেশী জাতের আম, জাম, কাঁঠাল, লেবু, পেয়ারা, জলপাই, বরই, মাল্টা, কমলা, পেঁপে, নিমসহ ঔষধী গাছের চারা ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। এই চারার হাটে প্রায় ৭০/৮০ টি চারাগাছের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার চারাগাছ বেচাকেনা হয়।
সাপাহার সদরের চারা ক্রেতা আবু বক্কার বলেন, তিনিও নতুন আম বাগান তৈরী করছেন তাই উন্নত জাতের আম চারা নিতে এসেছেন। এখানে যে সমস্ত চারা বিক্রি হয় তা খুব ভাল, গাছ নষ্ট হবার ভয় কম। এছাড়া সদর থেকে একটু বাইরে এই চারার হাট বসানোর ফলে চারা পরিবহনের ক্ষেত্রে লোকজন অনেকটা বেশী সুবিধা ভোগ করছে।
একাধিক চারা ব্যাবসায়ীরা জানান, এই হাটে আম্রপালি, গৌরমতি, বারী-৪, হিমসাগর(খিরসাপাতি), নাগ-ফজলি, আশ্বিনা ও বারমাসি কাঠিমন জাতের আমের চারা বেশী ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।
অনেকে আবার চায়না থ্রি লিচু ও থাই হাইব্রিড নারিকেল, বল সুন্দরী-থাই কুল, মাল্টার বাগান তৈরী করছে তাই এগুলো গাছের চারাও বিক্রয় হচ্ছে। বর্তমানে এই চারার হাটে উন্নতজাতের চারা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকা, সোনামুখী আশ্বিনা ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস, মেহগনিসহ অন্যান্য বনজ গাছের চারা ২০/২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম জানান, উপজেলার সদরের অদূরে টি এন্ড টি মোড়ে স্থাপিত ওই চারার হাটে সারা বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতীর আমের চারার সমাহার দেখে এ উপজেলার লোকজনের পাশাপাশি দূর দূরান্ত থেকে লোকজন এখানে এসে উন্নত জাতের আমের চারা সংগ্রহ করছেন। অল্পদিনেই আম এ উপজেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ ভূমিকা রেখেছে। তাই সব মিলিয়ে সাপাহার উপজেলার সর্বস্তরের কৃষকদের মাঝে সারা বছর ধরে আম চারা রোপণে ব্যাপক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।
সাপাহার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মজিবুর রহমান জানান, এ উপজেলায় জলবায়ুর কারণে ধানের চাইতে আম চাষে কৃষক বেশি লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে এ উপজেলার উৎপাদিত সুমিষ্ট রসালো ফল আম বর্তমানে দেশের সর্বত্র বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। আম বাগান তৈরি করে এরই মধ্যে অনেক কৃষকের ভাগ্যে বদলে গেছে।
আনন্দবাজার/শাহী/অনিক