দেশের সর্বত্র শীত জেঁকে বসেছে। তারই অংশ হিসেবে রাজধানীর অতি নিকটবর্তী জেলা শহর গাজীপুরেও শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। শীতকালের মাঝামাঝি সময়ে শীতের দেখা পেয়ে খুশিই হয়েছিলেন গাজীপুরের ভ্রাম্যমান পুরাতন গরম কাপড় ব্যবসায়ীরা। তাদের আমদানি করা বিভিন্ন রকমের শীতের গরম কাপড়গুলো বেশির ভাগই বিক্রি হয় জেঁকে আসা শীত অথবা ঘন কুয়াশার দিনগুলোতে। এখন শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও ঘন কুয়াশার কারণে দুপুরের পর থেকেই বেশ শীত অনুভব করছে এই অঞ্চলের মানুষ।
উত্তরের জেলা গুলোতে এ সময় কনকনে শীত নামে, আর শীতে গরম কাপড়ের ব্যবসাটাও হয় জমজমাট। কিন্তু গাজীপুরে এবার শীতের আমেজ শুরু হলেও গরম কাপড় বিক্রিতে উল্টো ভাব। ব্যবসায়ীরা এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন করোনা মহামারির প্রভাব। তাই শীত আসলেও পুরাতন এবং নতুন কাপড় ব্যসায়ীদের মনে খুশির আমেজ নেই। আর খুশির মাঝে বাগড়া দিয়েছে করোনা ভাইরাস।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গাজীপুর চৌরাস্তা, জয়দেবপুর বাজার, শিববাড়ি মোড়, শহরের রাজবাড়ি রোডের রেল স্টেশন, পৌর মার্কেটের সামনের ব্যস্ততম সড়ক গুলোর পাশে বসা পুরাতন ও নতুন কাপড়ের ভ্রাম্যমান দোকানগুলোতে নেই তেমন জমজমাট ভাব।
গাজীপুর চৌরাস্তার পুরাতন ও নতুন সোয়েটার ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল হালিম (৪০) এর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি জানান, গাজীপুরে প্রায় ১৬ বছর যাবৎ এই ব্যবসা করে আসছেন। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলায়। এই বছর করোনার কারণে তাদের ব্যবসায় একবারেই অচলাবস্থা। শতভাগের মধ্যে প্রায় ৫০%-এ নেমে এসছে আমাদের ব্যবসা। গত বছরেও ছিল আমাদের ব্যবসার চাঙ্গা ভাব। কিন্তু এবছর করোনার কারণে মানুষের আর্থিক অবস্থা বেশি ভালো না, তাই আমাদের ব্যবসা একশ ভাগের মধ্যে প্রায় ৫০%-এ নেমে এসেছে আমাদের ব্যবসা।
তিনি আরো জানান, এই বছর গাজীপুরের বিভিন্ন সোয়েটার কারখানা এবং ঢাকা থেকে পাইকারী ভাবে শীতের কাপড় ক্রয় করতে গেলে অনেক চড়া মূল্যে ক্রয় করতে হচ্ছে, তাই আমাদের ক্রেতাদের কাছেও একটু বেশি মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিটা কাপড়ের মূল্যে প্রায় ৫০-১০০ টাকা বেশি দিয়েই পাইকারী ভাবে ক্রয় করতে হচ্ছে। তাই আমরাও ক্রেতাদের কাছে ১০০ টাকা মূল্যের কাপড় ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। কিন্তু দোকান গুলোতে ক্রেতার সংখা খুবই কম। তাই আমাদের বিক্রির অবস্থাও খারাপ। আমরা গত শীতে গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারতাম আর এখন প্রতিদিন ৫শত থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫শত টাকা বিক্রি করতে পারি।
চৌরাস্তার বাস স্টেন্ডের অনুপম সুপার মার্কেটের নীচে সবচেয়ে বড় পুরাতন ও নতুন কাপড়ের ব্যবসায়ী মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, এবছর আমাদের শীতের কাপড় বিক্রির অবস্থা মোটেও ভালো নেই। গত বছর প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারতাম। দোকানে ৮ থেকে ১০ কর্মচারী কাজ করতো। আর এখন দোকান ভাড়া, কর্মচারী খরচ দিতেই হিমশীম খেতে হচ্ছে। এর একমাত্র কারণ বিক্রির অবস্থা ভালো নেই। এখন প্রতিদিন বিক্রি করতে পারি ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। আগে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে কাপড় আনতে লাগতো, আর এখন ২ মাস আগে যে কাপড়গুলো এনেছি সেগুলোই পুরোপুরি বিক্রি হয়নি।
আরিয়ান বস্ত্রালয়ের কাপড় বিক্রেতা আবু নাসের বলেন, অন্যান্য বছর শীতের শুরুতেই আমাদের বিক্রি থাকে চাঙ্গাভাব। আমরা ছোট ছোট বাচ্ছাদের কাপড় থেকে শুরু করে বুড়োদের কাপড় পর্যন্ত আমরা বিক্রি করে থাকি। আর প্রতিদিন বিক্রির পরিমাণ দাড়াতো ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। আর এই বছর করোনার কারণে আমাদের দোকানের সেই বিক্রির পরিমাণ দাড়িয়েছে ৫ হাজার টাকায়।
বিক্রি এই অবস্থায় আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, ধীরে ধীরে শীত বাড়ছে ,কিন্তু করোনার কারণে মানুষের ইনকাম কমে গেছে, আর ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে গাজীপুরের শীতের কাপড়ের বাজার। শীত নিবারনের জন্য কাপড় ক্রয় করতে বাজারে আসলেও দাম বেশি চাওয়ায় ওনারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে কাপড় কিনতে আসা কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় বড় মার্কেটের দোকান গুলো এবং শোরুম থেকে আমরা কাপড় কিনতে যাচ্ছি না, কারণ ভ্রাম্যমান ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে কাপড় সহজেই কেনা যায়। এখানে কম দাম হলেও ভালো মানের কাপড় পাওয়া যায়। তাই নিম্মবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের প্রায় সকলেই চলে আসে। এখানে আমাদের সাধ্যের মধ্যে ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের কাপড় কিনতে পারি।
আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ