বিরিয়ানি পছন্দ করেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। পেট যতই ভরা থাক না কেন বিরিয়ানির দোকানের সামনে দিয়ে গেলে খেতে ইচ্ছা করে না এমন কেউই নেই। যারা নিয়মিত বিরিয়ানি তারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন যে- বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল কাপড় পেঁচানো থাকে? তবে কেন এই লাল কাপড় পেঁচানো থাকে সেটা কি কেউ ভেবে দেখেছেন? আসুন লাল কাপড়ের রহস্য জেনে নেওয়া যাক।
বিরিয়ানি মোগলাই খাবার। বিরিয়ানির প্রথম প্রচলন হয় দিল্লি এবং লক্ষ্মৌতে। মুঘল আমলের রীতি অনুযায়ী খাবার পরিবেশনে লাল কাপড় ব্যবহার করা হতো। সেই রীতি অনুসারে এখনো বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল কাপড় ব্যবহার করা হচ্ছে। বলা যায় আভিজাত্য বা ঐতিহ্য রক্ষার জন্যই বিরিয়ানির হাড়িতে লাল কাপড় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
প্রতিটি রঙের নিজস্ব একটি ভাষা আছে। রঙ প্রভাব ফেলে মানুষের চিন্তায়ও। পৃথিবীর সব দেশেই রঙের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ও ব্যবহার রয়েছে। লাল রঙের ব্যবহার একেক দেশে একেক রকম। বিদেশি অতিথি যখন আসেন তখন তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। মাজার, উরস শরিফে বাঁশের মাথায় লালসালুর পতাকা ঝোলে। বিরিয়ানি, হালিমের ডেকেও থাকে লাল কাপড়। পান ও পনিরওয়ালারাও সাধারণত লালসালু ব্যবহার করেন।
কোনো কোনো দেশে লাল শৌর্য, আক্রমণ ও বিপদ অর্থে ব্যবহৃত হয়। আবার ট্রেনে বা রাস্তার সিগনালে বিপদের সংকেত হিসেবে ব্যবহার করা হয় লাল রঙ। তবে লাল রঙকে সাধারণত ধরা হয় সৌভাগ্য, উষ্ণতা, আনন্দ-উৎসব ও ভালোবাসার আবেগের প্রতীক হিসেবে। হৃদয়ের রঙ লাল, রক্তের রঙও লাল।
মুঘল সম্রাট হুমায়ুন যখন রাজ্য হারিয়ে ইরানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন তাকে পারস্য সম্রাট লালগালিচার উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। খাবার পরিবেশনে দরবারি রীতিগুলোতে রূপালি পাত্রের খাবারগুলোর জন্য লাল কাপড় আর ধাতব ও চিনামাটির জন্য সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিয়ে আসা হতো, যা মুঘলরাও তাদের দরবারে চালু করেন। শুধু তাই নয়, সম্মানিত ব্যক্তি বা আধ্যাত্মিক সাধকদের জন্য ছিল লাল পাগড়ির ব্যবস্থা।
আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস