দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও ব্যাংকগুলো কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ধেকও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন না করতে পারায় ঋণ বিতরণে এনজিওগুলোকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
দেশে করোনা সংকট মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় আয়োজিত ধারাবাহিক কর্মশালানা ২য় দিনে গেল বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ওই বৈঠকে সিএমএসএমই প্যাকেজ বাস্তবায়ন নিয়ে যে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়, তা ছিল হতাশাব্যঞ্জক। সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এই খাত করোনার অভিঘাত মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াতে না পারায় অর্থনীতিতেও কোন গতি ফিরছে না বলে উল্লেখ করা হয়।
অর্থবিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, সিএমএসএমই প্যাকেজ বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে আমরা অনেক হতাশ। ব্যাংকগুলো মাইক্রো ও কুটিরশিল্পের উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে একেবারেই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম গঠন করলেও মাত্র ৮টি ব্যাংক এই স্কিমে যুক্ত হয়েছে।
এমতাবস্থায় পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন ও মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) সহায়তায় গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাইক্রো ও কুটিরশিল্পের উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত্ব এসব সংস্থার সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী এনজিওগুলোর নেটওয়ার্কিং আছে এবং এসব সংস্থা এনজিওগুলোর মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে থাকে। তাই এদের সম্পৃক্ত করে খুব দ্রুত এবং সহজে কুটিরশিল্প ও মাইক্রো উদ্যোক্তাদের কাছে চলতি মুলধনের (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) যোগান দেয়া সম্ভব হবে।
ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এই প্যাকেজ বাস্তবায়নে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শুরু থেকেই করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের উদ্যোক্তাদের বড় অংশেরই ব্যাংক হিসাব নেই। জামানত দেয়ার মতো কোনো সম্পদও নেই।
এসএমই প্যাকেজ থেকে ঋণ বিতরণ কাঙ্খিত মাত্রায় নয় স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির সভায় বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল তহবিল থেকে যে হারে ঋণ দেয়া হচ্ছে সে হারে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া যাচ্ছে না।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ক্ষুদ্র ও কুটির উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দের যে অংশ এখনও বিতরণ করা হয়নি, তার উল্লেখযোগ্য অংশ এনজিওদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। ইতোমধ্যে টার্মস এন্ড কন্ডিশন তৈরির কাজ শুরু করেছে অর্থবিভাগ। বিদ্যমান ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করা র আরও বেশি ব্যাংককে অন্তর্ভূক্ত করার উদ্যোগও নেবে অর্থমন্ত্রণালয়।
এছাড়া পিকেএসএফ সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে একটি সার্কুলার জারি করবে। সুপারিশগুলি বাস্তবায়িত হলে, এমএফআইগুলি ১০-১৩ শতাংশ প্রশাসনিক ব্যয় এবং ১-২ শতাংশ ঋণ একীকরণ রিজার্ভের ফলে ৪ শতাংশ ক্ষতি হতে পারে।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে