দেশের বড় একটি করপোরেট গ্রুপের ভোগ্যপণ্যের উৎপাদক কোম্পানি একই হিসাব বছরের জন্য আলাদা দুটি আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কিন্তু দুই ধরনের আর্থিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে দুই রকম। শুধু তা-ই নয়, তথ্য জালিয়াতির উদ্দেশ্যে ভিন্ন দুজন নিরীক্ষকের মাধ্যমে নিরীক্ষাও করা হয়েছে প্রতিবেদন দুটি। আর্থিক প্রতিবেদনে এ জালিয়াতির বিষয়টি এখন তদন্ত করছে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)।
শুধু এই কোম্পানি নয়, আর্থিক প্রতিবেদনে এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। মূলত ঋণ নেয়ার জন্য ব্যাংককে এক ধরনের এবং রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আরেক ধরনের আর্থিক তথ্য দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এজন্য তৈরি করা হচ্ছে একই হিসাব বছরের দুটি ভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদন। এ ধরনের বেশ কয়েকটি কোম্পানি বর্তমানে এফআরসির নজরদারিতে রয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদনে এমন জালিয়াতির ঘটনা প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছে সংস্থাটি।
বর্তমানে এফআরসি অটোমোবাইল, সার্ভিসিং, তথ্যপ্রযুক্তি, ভোগ্যপণ্য ও শিল্প খাতে ব্যবহূত কম্প্রেসারের ব্যবসা রয়েছে এমন একটি বড় করপোরেট গ্রুপের ভোগ্যপণ্য উৎপাদকারী একটি কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটি ২০১৭-১৮ হিসাব বছরের জন্য তৈরি করা দুটি আর্থিক প্রতিবেদনে মোট সম্পদ, রিটেইনড আর্নিংস, ব্যাংকঋণ, বিক্রি, আয়কর ও কর-পরবর্তী নিট মুনাফার ভিন্ন তথ্য দিয়েছে।
প্রথম প্রতিবেদনটি নিরীক্ষা করা হয়েছে ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল। আর দ্বিতীয় প্রতিবেদনটি নিরীক্ষা করা হয়েছে একই বছরের ৬ আগস্ট। প্রথম প্রতিবেদনে কোম্পানিটির মোট সম্পদ দেখানো হয়েছে ৩২৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রতিবেদনে সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩৬৮ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে।
একইভাবে প্রথম প্রতিবেদনে রিটেইনড আর্নিংস ৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় প্রতিবেদনে সেটি ৬৩ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। প্রথম প্রতিবেদনে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে কোম্পানিটির ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ৩০১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রতিবেদনে ঋণ কমিয়ে ২৭৩ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। প্রথম প্রতিবেদনে দেখানো ২৪৪ কোটি টাকার বিক্রি দ্বিতীয় প্রতিবেদনে ২৭৮ কোটি টাকা হয়ে গেছে।
আয়কর ও কর-পরবর্তী মুনাফার তথ্যেও দুই প্রতিবেদনে আকাশ-পাতাল তফাৎ লক্ষ্য করা গেছে। প্রথম প্রতিবেদনে ২০১৭-১৮ হিসাব বছরে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আয়কর বাবদ দেখানো হয়েছে। দ্বিতীয় প্রতিবেদনে আয়করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকায়। কর-পরবর্তী মুনাফা প্রথম প্রতিবেদনে ছিল ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা দ্বিতীয় প্রতিবেদনে বেড়ে ৩২ কোটি টাকা হয়েছে।
ভিন্ন উদ্দেশ্যে ভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির সংস্কৃতি দেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। দেশের ব্যাংক খাতে ঘটে যাওয়া বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারিগুলোর ক্ষেত্রেও আর্থিক প্রতিবেদন জালিয়াতি করা হয়েছে। এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঠেকাতে ঋণ গ্রহণ ও নবায়নের সময় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের নিরীক্ষিত হালনাগাদ আর্থিক প্রতিবেদন জমা দেয়া বাধ্যতামূলক করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে সম্প্রতি চিঠি দিয়েছে এফআরসি।
একই সাথে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণগ্রহীতার জমা দেয়া প্রতিবেদনের যে কোনো তথ্য তদন্তের প্রয়োজনে এফআরসি চাইলেই সরবরাহ করার জন্যও চিঠিতে অনুরোধ করেছে সংস্থাটি।
সূত্র : বণিক বার্তা
আনন্দবাজার/ইউএসএস