অকাল বৃষ্টিতে ফেনীর ৬ উপজেলায় আমনের ব্যপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষকরা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে গত ২১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ৩ দিনের ভারি বর্ষণে জেলার একশ হেক্টরের অধিক জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস থেকে জানা গেছে।
এতে এক হাজারের অধিক কৃষক ক্ষতির শঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে জমিতে জমে থাকা পানি দ্রুত সরাতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে জানায়িছে কৃষি বিভাগ ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক জানান, চলতি মৌসুমে ফেনীর ৬ উপজেলায় ৬৬ হাজার ৫ শত ২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে।
এরমধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৯ হাজার ২৫০ হেক্টর, ফুলগাজী উপজেলায় ৬ হাজার ২০৫ হেক্টর, পরশুরাম উপজেলায় ৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর, দাগনভুঁইয়া উপজেলায় ৮ হাজার ৩১০ হেক্টর, ও সোনাগাজী উপজেলায় ২০ হাজার ৯৭০ হেক্টর পরিমাণ রোপা আমন আবাদ হয়েছে।
লক্ষমাত্রা শতভাগ অর্জিত হওয়ায় চলতি মৌসুমে। ভালো ফলনের আশা করলেও গত কয়েকদিনের মুষলধারে বৃষ্টিতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
পরশুরাম উপজেলার বীরচন্দ্র নগর গ্রামের মোঃ খায়ের নামে এক চাষি জানান, ৪০ শতক জায়গাতে আমন চাষ করেন তিনি, সার, বীজ, শ্রমিক খরচসহ এতে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ভালো হওয়া নিয়ে আশাবাদী থাকলেও সাম্প্রতিক বর্ষণে জমিতে পানি জমে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় ফসল নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তিনি।
ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরশুরাম উপজেলার জয়ন্তী নগর গ্রামের আরেক কৃষক হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ধান বিক্রি করে ধার পরিষদ করবো ভেবে ঋণ নিয়ে জমিতে ধান লাগিয়েছি বৃষ্টির কারণে বেশিরভাগ ধান গাছ নুয়ে যাওয়ায় ফসল নিয়ে চিন্তিত।
অধিকাংশ কৃষকরা জানান, ফলন আশানুরূপ হওয়ার পরেও বাতাস আর ভারী বর্ষণে বেশিরভাগ ফলন নুয়ে গেছে। এতে করে জমিতে পানি থাকায় ফসল পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, সদর উপজেলায় ১৫ হাজার ৯৪০ হেক্টরের মধ্যে আবাদকৃত ২০ হেক্টর জমির ফসল নুয়ে পড়ছে। তবে ধান কাটার পর ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।
অন্যদিকে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আশ্রাফুল ইসলাম জানান, ওই উপজেলার ৯ হাজার ২ শ ৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা আমন ধানের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ হেক্টর পরিমাণ জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা অন্যান্য উপজেলার তুলনায় বেশি।
এছাড়া সোনাগাজী উপজেলায় আবাদকৃত ১৯ হেক্টর জমির ধান, পরশুরাম উপজেলার ৩ হেক্টর, দাগনভুঁইয়ার ৫ হেক্টর জমির ধান বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী জানান, কৃষকরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে এ জন্য জেলা কৃষি বিভাগ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। পুর্নবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া আগামীতে এই ধরণের ক্ষতি এড়াতে কৃষকদের আগাম জাতের চারা রোপণ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আনন্দবাজার/শাহী/সুজন