ঢাকা | শুক্রবার
১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রূপগঞ্জে বিলীনের পথে সৌন্দর্যের প্রতীক লাল শাপলা

নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর লাল শাপলার প্রতি আর্কষণ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের খালে-বিলে ফুটত বিভিন্ন প্রজাতির শাপলা। এর মধ্যে লাল শাপলা বা রক্ত কমল অত্যন্ত সৌন্দর্যের আর্কষণ। রাস্তার ধারে বিলে বা পুকুরে লাল শাপলা দেখে পথচারীরা পুলকিত হতেন। অনেকে রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে এক নজর দেখে নিতেন নয়নাভিরাম লাল শাপলার সেই দৃশ্য। কেউ কেউ আবার লাল শাপলা তুলে মালা বানিয়ে গলায় পরে আনন্দ পেতেন।

বর্ষা মৌসুম এলেই রূপগঞ্জের বিল-ঝিল, পুকুর-ডোবা, জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নিত লাল শাপলা। বর্ষাকালে প্রথম দেখা মিলত এ শাপলার। এরপরে শরৎকালে নালা ও ডোবায় দেখা যেত এ ফুল। বসন্তের শেষ পর্যন্ত নিচু জমি ও বড় পুকুরে এ ফুল শোভা পেত। লাল শাপলাকে ইংরেজিতে (Red Water Lily) বলা হয়। রক্তকমল বা লাল শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম (Nymphaea Rubra Rxob) এই ফুলগুলো লাল বর্ণের হয়ে থাকে। পুকুরে ও বিলে পাওয়া যায়। এটা একটি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। সবজি হিসেবে বাঙালির খাদ্য তালিকায় শাপলার অর্ন্তভুক্তি বহু প্রাচীন। সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙের শাপলা নানা ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ।

লাল শাপলার ঔষধি গুণের কথা চীন ও ভারতের ভেষজ পন্ডিতেরা তিন হাজার বছর আগেই জানতেন। ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি পদ্মমধু চোখের ছানির এক মহৌষধ। এর বীজ দুই হাজার বছর পর্যন্ত জীবন্ত থাকতে পারে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এ ফুল ফোটা শুরু হয়ে প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত বিল-ঝিল, জলাশয় ও নিচু জমিতে জন্ম নেয় লাল শাপলা। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য ছিল বিধায় এলাকার লোকজন শাপলা তুলে খাদ্য হিসেবে নিজেরা ব্যবহার করতো এবং বিক্রিও করতো। এ শাপলা শহুরেজীবনেও খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। তবে আবাদি জমি ভরাট করে বাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের বানানোর ফলে বিলের পরিমান যেমন কমছে, তেমনি শাপলা জন্মানোর ক্ষেত্রও কমে আসছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল আবাদের কারণে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিতভাবে খাল-বিল ও জলাশয় ভরাটের কারণে রূপগঞ্জের জলাশয় ও বিলাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা। রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ডাঃ মাহমুদুল হাসান জানান, শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাকসবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও আয়রন। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমান আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি।

তিনি আরো বলেন, শাপলা চুলকানি ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী। তাছাড়া ডায়াবেটিস, বুক জালাপুরা, লিভার, ইউরিনারি সমস্যার সমাধানসহ নারীদের মাসিক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঐতিহাসিককাল থেকেই শাপলার ফল ড্যাপ দিয়ে চমৎকার সুস্বাদু খৈ ভাজা যায়। যেটি গ্রামগঞ্জে ড্যাপের খৈ বলে পরিচিত। মাটির নিচের মূল অংশকে (রাউজুম) আঞ্চলিক ভাষায় শালুক বলে।

মুড়াপাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষক নুরুজ্জামান খাঁন জানান, শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। আগামী প্রজন্মকে হয়তো ছবি দেখেই জাতীয় ফুল শাপলা চিহ্নিত করতে হবে। এ অবস্থায় আমাদের জাতীয় প্রয়োজনে এর বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে লাল শাপলাকে। রূপগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জানান, সাধারণত শাপলা দুই প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি শাপলা হিসেবে ও লাল রঙের শাপলা ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়।

আনন্দবাজার/শাহী/ফয়সাল

সংবাদটি শেয়ার করুন