রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়ার নয় স্বাধীনতাপন্থী নেতাকে কারাদণ্ড দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার (১৪ অক্টোবর) কাতালোনিয়ায় বিক্ষোভ শুরু করেন স্বাধীনতাকামী কাতালানরা।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিক্ষোভের পঞ্চম দিনে, বিক্ষোভকারীদের সাধারণ ধর্মঘটের কর্মসূচিতে অচল হয়ে পড়ে কাতালোনিয়ার রাজধানী। এ সময় সেন্ট্রাল বার্সেলোনার প্রায় আধা লাখ মানুষ শাস্তির প্রতিবাদ জানাতে কাতালোনিয়ার পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে যায়।
স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে পুলিশের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, অন্তত ৫ লাখ ২৫ হাজার কাতালান বিক্ষোভকারী বার্সেলোনা অবরোধ করে রাখেন। ‘স্বাধীনতা চাই’, ‘এই রাস্তা আমাদের’, ‘রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি চাই’, এসব স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছিল বার্সেলোনার রাজপথ।
২০১৭ সালে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট আয়োজনে ভূমিকার জন্য গত ১৪ অক্টোবর অঞ্চলটির ৯ স্বাধীনতাকামী নেতাকে কারাদণ্ড দেয় স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট। আদেশে তাদের ৯ থেকে ১৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আদালতের রায়ের পরই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে কাতালানরা।
এই বিশাল জনসমাবেশ প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণ থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সহিংস হয়ে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজন রাস্তা অবরোধ করে ময়লার কনটেইনারে আগুন ধরিয়ে দেন। তারা দাঙ্গা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়লে পুলিশও তাদের দিকে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে এবং লাঠি হাতে বিক্ষোভকারীদের পাল্টা ধাওয়া করে।
শুক্রবার দুপুরে কাতালোনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল করে বার্সেলোনার কেন্দ্রে এসে জড়ো হন বিক্ষোভকারীরা। এতে গোটা শহর অচল হয়ে যায়। বুধবার (১৬ অক্টোবর) থেকে জিরোনা, তারাগোনা, ভিচ, মারতোরেলসহ অন্য শহর থেকে পায়ে হেঁটে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনায় জড়ো হন তারা।
এদিকে, বিক্ষোভ-সংঘর্ষের কারণে বার্সেলোনার এ পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৫ লাখ ইউরো। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই শতাধিক আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার কাতালোনিয়ায় ১৬ বিক্ষোভাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কাতালান ফ্রি পিপল পার্টির তোনি ক্যাসারাসের মতে, সহিংসতার কারণে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের মনোযোগ পাওয়া গেলেও এটা পুরো বিক্ষোভের ছোট একটা চিত্র মাত্র।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাকামী কাতালানদের অধিকাংশই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বিশ্বাসী, দাবি পূরণ না হলে তারা রাস্তায় নামবেই। অনেক বছর ধরে কাতালোনিয়ায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। আমাদের নেতাদের কারাদণ্ড আর বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ করা হলেও আমরা হাল ছাড়িনি।
শুক্রবার শহরের প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করে রাখেন কাতালানরা। দোকানপাট বন্ধ করে ও কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে ধর্মঘট পালন করেন অধিকাংশ স্বাধীনতাকামী জনগণ। ফলে, বার্সেলোনার ‘এল প্রাত’ বিমানবন্দরের ৬০টি ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া, কাতালোনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচলও। এর আগেও বিক্ষোভের কারণে বিমানবন্দরের শতাধিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা বিমানবন্দরের প্রবেশপথ অবরোধ করে রেখেছে।
যদিও মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) কাতালোনিয়ার প্রাদেশিক পুলিশ বাহিনী থেকে জানানো হয়েছে, বিমানবন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় কোনো বিক্ষোভকারীর প্রবেশের চেষ্টাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এসব হুমকিকে পাত্তা না দিয়ে শুক্রবার শহরের প্রধান সড়কগুলো অবরোধ করে রাখে বিক্ষোভকারীরা। সড়কের ওপর টায়ারে আগুন ধরিয়ে ও রাস্তায় আলপিন ছড়িয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেয় তারা।
স্পেন-ফ্রান্স সীমান্তবর্তী এপি-৭ মহাসড়কটি বন্ধ হয়ে গেলে দুই দেশের মধ্যে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। জিরোনায় কৃষকেরা ট্রাক্টর দিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেয়।
বার্সেলোনার কেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ‘সাগ্রাদা ফ্যামিলিয়া’ গির্জার প্রবেশপথ অবরোধ করে স্বাধীনতাকামীরা বিক্ষোভ শুরু করলে সেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ হয়ে যায়।
আনন্দবাজার/খলিফা