ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাজীপুরে সবজির চড়া দামে মানুষ দিশেহারা

শাকসবজির দাম চড়া হওয়ায় কষ্টে নিন্ম আয়ের মানুষ গাজীপুরের সবজির বাজারে বন্যার প্রভাব ছিল আগ থেকেই। এরসঙ্গে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে আবারো। গত কয়েকদিনে কেজি প্রতি সবজির দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। কোনো কোনো সবজির দাম বেড়েছে আরো বেশী। আর ডিমের দামও বেড়ে গেছে।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে কাঁচা মরিচের দাম চড়া। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম ২০০ টাকার ওপরে। সবজির দাম কয়েক সপ্তাহ ধরেই নিন্ম আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। নতুন করে দাম বাড়ায় চাপে পড়েছে মধ্যম আয়ের মানুষও। করোনা দুর্যোগে মানুষের আয় কমায় বাজার করতে এখন সাধারণ ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছে।

বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অন্য বছরগুলোতে এ সময় বাজারে সবজির দাম সাধারণত কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে থাকে। বর্তমানে এসব সবজির দাম দেড়গুণ বেড়েছে। কোনো কোনো সবজির দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। শীত মৌসুমের সবজি না আসা পর্যন্ত এমন দাম থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা। জয়দেবপুর বাজার, হাড়িনাল বাজার, রথখোলা কাচাবাজার, চৌরাস্তা বাজার ও চৌরাস্তার আড়ৎদাররা বলছেন, করোনার প্রভাব কমলেও উত্তরাঞ্চলে বন্যা থাকায় আড়তে সবজি কম আসছে। এরপর বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক সবজি ক্ষেত। এহেন বন্যা পরিস্থিতিতে সব সবজির দাম বেশি।

গাজীপুর শহরের সড়কে ও আবাসিক এলাকায় রিক্সাভ্যানে বিক্রেতারা করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, হাইব্রিড করলা ৭০ টাকা, প্রতি কেজি বরবটি ৭০টাকা, চিচিংগা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি করছে। টমেটোর কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গাঁজর ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং স্থানিয় কৃষকদের ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।

এসব সবজি বাজার ও মান ভেদে গত দুই মাস আগে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে পাওয়া গিয়েছিল। কিছুটা কমে পাওয়া যাচ্ছে কচুর মুখি ও পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। লাউয়ের পিস ৭০ থেকে ৯০ টাকা, চালকুমড়া ৬০ থেকে ৯০ টাকা পিস।

কাঁচা মরিচের দাম দেড় মাস ধরে ২০০ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আরেক দফা বেড়ে গড়ে দু’শ টাকায় উঠেছে। এখন কোনো ক্রেতাই একশ থেকে আড়াই শ গ্রামের বেশী কাঁচা মরিচ কিনতে দেখা যায়না। এক কেজি নিলে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দাম রাখা হচ্ছে। আলুর দাম এখনো ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজি।

শহরের বিভিন্ন বাজারে লালশাক, কলমিশাকের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে পুঁইশাক। পুঁইশাকের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আর লালশাক ও কলমিশাকের বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দামে। একজন গৃহিনী আক্ষেপ করে বলেন, এখন ৫০০ টাকা দিয়ে দুই দিনের কাচা বাজার করা যায়না। গাজীপুর শহরের রথখোলা এলাকার মতিনের হোটেলের মালিক আব্দুল মতিন বলেন, চাল, ডাল, ডিম, তৈল ও সকল প্রকার সবজির দাম বেশী, অথচ কাস্টমাররা আগের মতোই বিল দিতে চায়। খাবার বিল পাঁচ টাকা বেশী হলেই আপত্তি করেন।

হাড়িনাল এলাকার কৃষি খামারের মালিক শাকিল আহমেদ, বুলবুল আহমেদ বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে বারবার সবজি ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, সবজির উৎপাদনও কমে গেছে, তাই বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।

গাজীপুর রাজবাড়ি সড়কে রিক্সাভ্যানের সবজি বিক্রেতা লতিফ বলেন, উত্তরবঙ্গের সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। আড়তে কাড়াকাড়ি করে সবজি কিনতে হয়। তাই কিনতে হয় বেশীতে বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে।

এদিকে চড়া সবজির দামের সঙ্গে বাড়ছে ভোজ্য তেল সয়াবিনের দামও। চলতি সপ্তাহে লিটারে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৮২ থেকে ৮৫ টাকা লিটার। আর বোতলজাত সয়াবিন তৈলের দাম পাঁচ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ

সংবাদটি শেয়ার করুন