ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় গাজীপুরে শীতল পাটি ব্যবসায় ধস

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার পর পরই দেশের বিভিন্ন জেলা লকডাউনের আওতায় চলে আসে। এক পর্যায়ে সমগ্র বাংলাদেশে লকডাউন প্রক্রিয়া শুরু হয়। আর এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানী ঢাকার অতি কাছের জেলা শহর গাজীপুর। শিল্প অধ্যুশিত এই জেলায়  ধীরে ধীরে যখন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে, ঠিক তখনই দেয়া হয় লকডাউন।

লকডাউন ঘোষণার পরই ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়ে। এদিকে দীর্ঘদিন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বন্ধ হয়ে যায় তাদের আয়ের রাস্তা। বিশেষ করে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি, মাঝারি থেকে বৃহৎ ব্যবসায়ীদেরও আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ভেঙ্গে পড়ে তাদের ব্যবসার মূল চালিকা শক্তি। এরই ধারাবাহিকতায় মহামারি করোনার করাল গ্রাসে গাজীপুর শহরের শীতল পাটি ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় নেমে আসে ধস।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র রথখোলা বাজারের শীতল পাটি ব্যবসায়ীদের হতাশার চিএ। কথা হয় সজয় শীতল পাটি ঘরের স্বত্বাধীকারী কাঞ্চুরাম ভৌমিক এর ছেলে সজয় চন্দ্র ভৌমিকের সঙ্গে। তিনি দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, আমার বাবা (কাঞ্চুরাম ভৌমিক) দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ শীতল পাটির ব্যবসা করছেন। আগে তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফেরি করে পাটি বিক্রি করতেন। এক বছর হলো আমরা বড় আকারে দোকান দিয়েছি শীতল পাটি বিক্রির পাশাপাশি প্লাস্টিক পাটি, দোলনা, পাটের সিকা, পাটের দোলনা, বাঁশের তৈরী চালুন, কুলা, ডালা, মাতলাসহ অন্যান্য দ্রব্য পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করি। করোনা আসার পূর্বে প্রতিদিন দোকানে ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকার পন্য বিক্রি করতাম। এদিকে লকডাউনের সময় দুই মাস দোকান বন্ধ ছিলো। লকডাউন শিথীল হওয়ার পর দোকান খুললেও ক্রেতা শূন্যতায় আমাদের প্রতিনিয়ত ভূগতে হচ্ছে। এখন সারাদিনে এক থেকে দুইজন ক্রেতার দেখা মিললেও সবাই পন্য ক্রয় করেনা।

তিনি আরো বলেন, শীতল পাটির ব্যবসা মূলত গরম কালকে নির্ভর করে। আর এই গরমের সময়েও বিক্রি হচ্ছে না গরমের এসি নামক শীতল পাটি। পাশাপাশি অন্য পন্য গুলোও বিক্রি হচ্ছে না। সারাদিন চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে হয় ক্রেতার আশায়। এদিকে দাম কমিয়ে বললেও নিচ্ছে না শীতল পাটি। যদিও ক্রেতারা আসে ,তারা বলে আমরা দেখতে আসছি। হাতে টাকা নেই এজন্য আমরা কিনতে পারছি না।

তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা এবং তার পাশাপাশি আমাদের সংসার খরচ চালাতে অনেক বেশিই হিমশিম খেতে হচ্ছে। সর্বোপরি তিনি বলেন এই মহামারি করোনা আমাদের ব্যবসায় ধস নামিয়ে দিয়েছে তার পাশাপাশি আমাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে যাচ্ছে। আকাশের পানে তাকিয়ে তিনি বলেন, জানিনা আর কতদিন এভাবে চলতে হবে।

রথখোলা বাজারের আরেক শীতল পাটি ব্যবসায়ী পাটি ঘর দোকানের স্বত্বাধীকারী রাজ কুমার দত্ত দৈনিক আনন্দবাজারকে জানান, আগে আমার বাবা ফেরি করে পাটি বিক্রি করতেন। দুই বছর হলো আমরা দোকান দিয়েছি, ভালো ভাবেই চলছিল আমাদের ব্যবসা। কিন্তু করোনা ভাইরাস আমাদের এই ব্যবসায় একেবারে ধস নামিয়ে দিয়েছে। করোনার পূর্বে প্রতিদিন ৩০০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত গড়ে বিক্রি করতে পেরেছি আর এখন সারাদিনে ১০০ টাকাও বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হয়।

তিনি আরো বলেন, টাঙ্গাইল থেকে হরেক রকমের শীতল পাটি এনে আমরা বিক্রি করে থাকি। বিশেষ করে এই গরমের সময় অনেক পাটি বিক্রি হওয়ার কথা কিন্তু করোনার কারণে দোকানে ক্রেতাই আসে না। আসলেও কিনতে চায়না। আমরা এখন পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছি।

আনন্দবাজার/শাহী/সবুজ

সংবাদটি শেয়ার করুন