সম্প্রতি সুনামগঞ্জের হাওরে ভাসমান বীজতলায় গজিয়েছে ধানের চারা। উপজেলায় তিন দফা বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হলেও বর্তমানে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছেন। হাওরের নানা এলাকায় ভাসমান বীজ তলায় ধানের চারা তৈরি করছেন কৃষকরা।
জামালগঞ্জের ভীমখালি ইউনিয়নের গোলামীপুর গ্রামের কৃষক জসীম উদ্দিন, আব্দুল খালেক এবং শাহানূর মিয়া ভাসমান বীজতলা তৈরি করে ধানের চারা গজিয়েছেন। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সময় মতো রোপা-আমনের চাষ করতে না পারায় ভাসমান বীজতলার উৎপাদিত চারা বিনা মূল্যে চাষীদের বিতরণ করা হবে।
জানা গেছে, কর্দমাক্ত পানির ওপর ভাসমান অবস্থায় স্থির রয়েছে রোপা-আমনের দর্শনীয় বীজতলাটি। কুচুরিপানা এবং মাটিকে প্রক্রিয়াজাত করে প্রস্তুত করা হয়েছে বিয়ার-২২ ধানের বপন উপযোগী বীজতলা। যা আস্তে আস্তে রোপণ উপযোগী হয়ে উঠছে। আর ক’দিন পরেই জমিতে রোপণ করা হবে এই ধান চারা।
চলতি আমন চাষের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে এসব ভাসমান বীজতলার তৈরি চারা। এসব বীজতলায় বিআর-২২ জাতের বীজ বপন করা হয়েছে। এই চারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
আরও জানা গেছে, বন্যায় বিপর্যস্ত দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সম্প্রদায়কে আপদকালীন সুবিধা দিতে জামালগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এই ভাসমান কার্যক্রমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের পতিত বিল বা ডোবায় ভাসমান বেডে ধান বীজ বপনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এতে ফলনও ভালো হবে এবং পানিতে ডুবার আশঙ্কাও থাকবে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কৃষি উপপরিদর্শক সত্যেন্দ্র কুমার দেবনাথ ও সাইদুল ইসলাম রুবেল জানান, রোপা-আমনের এ মৌসুমে প্রায় সময়ই বন্যাক্রান্ত হন কৃষক। তখন বীজতলা ডুবে গেলেও ভাসমান প্রক্রিয়ায় তারা যাতে বন্যা সমস্যা উতরিয়ে উঠতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা বিভিন্নভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। কৃষকরা যাতে ভাসমান বেডে ধান চারা উৎপন্ন করে সুবিধাভোগী হয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার কবল থেকে তাদের রক্ষা করতেই আমাদের এ প্রয়াস।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সালাউদ্দিন টিপু জানান, আকস্মিক বন্যার কারণে রোপা-আমন ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে চারার অভাবে কৃষকের অনেক জমি পতিত থেকে যায়। অতি বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে চারা তলিয়ে গেলে কৃষকরা সঙ্কটের মুখোমুখী হন। এ সমস্যা সমাধানে ভাসমান বেডে রোপ-আপন ধানের বীজতলা তৈরি করে ১৫ থেকে ২০ দিনেই চারা জমিতে রোপণ করা যায়। কৃষকেরা সঠিক সময়ে সঠিক বয়সের চারা রোপণ করতে পারেন। ফলে রোপা-আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। আকস্মিক বন্যা হতে রোপা-আমন আবাদে এটি একটি বড় প্রযুক্তি বলে ধরে নেওয়া যায়।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে