ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাঁঠাল থেকে তৈরি হবে সুপারব্যাটারি!

স্মার্টফোন, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে অনেক রকমের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও অবিশ্বাস্য গতিতে জনপ্রিয় হতে থাকা বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির শক্তি জোগান দিতে ব্যাটারির নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অল্প সময়ে চার্জ হবে ও বেশি সময় ধরে শক্তি সরবরাহ করবে এমন প্রযুক্তির ব্যাটারি উদ্ভাবনে ঘাম ঝরাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

শুধু সময় ও ব্যয় কমানোই লক্ষ্য নয়, আধুনিক লিথিয়ান আয়ন ব্যাটারিতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় খনি থেকে সেগুলোর সংগ্রহ ও পরিশোধন বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লিথিয়ান আয়ন ব্যাটারির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লিথিয়ান ও কোবাল্টের বিকল্প অনুসন্ধান চলছে। এক্ষেত্রে অবশ্য অনেকটা অগ্রগতিও দেখা গেছে। কিন্তু চার্জের ঘনত্ব ও স্থায়িত্বের দিক থেকে এখনো পর্যন্ত লিথিয়াম আয়নের কাছকাছি যেতে পারেনি কোনোটিই।

তবে বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি কিছুটা আশা জাগিয়ে তুলছে। এর অন্যতম একটি উপাদান হলো বিশ্বের বৃহত্তম ফল কাঁঠাল। থাইল্যান্ডের ডুরিয়ানও একই পরিবারভুক্ত ফল।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসায়নিক প্রকৌশলী ভিনসেন্স গোমেজ ও তার দল খাবারের উচ্ছিষ্ট কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। তারা বিশ্বের তীব্রতম গন্ধযুক্ত ফল ডুরিয়ান এবং সবচেয়ে বড় ফল কাঁঠালের ফেলে দেয়া অংশ থেকে সুপার ক্যাপাসিটর বানিয়েছেন। এটি স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ চার্জ করতে পারবে মাত্র কয়েক মিনিটে।

বৈদ্যুতিক শক্তি বেশি সময় ধরে রাখার একটি বিকল্প পদ্ধতি হলো সুপার ক্যাপাসিটর। এটি মূলত একটি রিজার্ভার হিসেবে কাজ করে। দ্রুত চার্জ হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎশক্তি অবমুক্ত করে। এই বৈশিষ্ট্যের ফলে ফ্ল্যাশলাইটে ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয়।

সুপার ক্যাপাসিটর সাধারণত গ্রাফিন দিয়ে তৈরি করা হয়। তবে গ্রাফিনের মতো বস্তুগুলো অনেক ব্যয়বহুল। গোমেজের দল একই বৈশিষ্ট্রের বস্তু তৈরি করেছেন ডুরিয়ান এবং কাঁঠালের ফেলে দেয়া ভূতি ও খাবার অযোগ্য অংশ দিয়ে। তারা স্পোর (ক্ষুদ্র ছিদ্র) বিশিষ্ট বিশেষ কার্বন তৈরি করেছে যা খুবই হালকা এবং প্রাকৃতিক শক্তি সঞ্চলের চমৎকার বৈশিষ্ট্য রয়েছে এটির।

গবেষক দলটি কাঁঠালের মাঝখানের স্পঞ্জের মতো অংশটি প্রথমে গরম করেন, তারপর অত্যন্ত ঠাণ্ডায় শুকানো হয়। এরপর আবার সেটি দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পোড়ানো হয়। তারপর পাওয়া যায় কালো, স্পোর বিশিষ্ট অত্যন্ত হালকা একটি বস্তু। এটিকেই সুপার ক্যাপাসিটরের তড়িদ্বার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য লাবনা শবনম জানিয়েছেন, এই সুপার ক্যাপাসিটরটিকে মাত্র ৩০ সেকেন্ডে চার্জ করা যায় আর এটি বিভিন্ন ডিভাইস চালানোর কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। তিনি জানান, আপনার ফোনটি এক মিনিটের মাঝে চার্জ করতে পারাটা একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা নিশ্চয়ই!

এই গবেষকদের এখনকার লক্ষ্য এই সুপার ক্যাপাসিটরটি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের বিদ্যুৎ সঞ্চয় করার একটি টেসকই ডিভাইস হিসেবে তৈরি করা। এটি দিয়ে যানবাহন ও বসবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

সুত্র: বিবিসি

সংবাদটি শেয়ার করুন