করোনা ভাইরাসের কারনে রপ্তানি বন্ধ থাকায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রান্তিক কাঁকড়া চাষিদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠা। সম্প্রতি বহিঃর্বিশ্বে রপ্তানিমুখী এ শিল্পটির রপ্তানি প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় উৎপাদিত এলাকা সহ পাইকগাছাসহ দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে এ শিল্পের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে এ পেশার সাথে জড়িত হাজার হাজার প্রান্তিক চাষী, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা অজানা শঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন।
ইতোমধ্যে হ্যাচারী পর্যায়ে তাদের উৎপাদিত কাঁকড়ার সরবরাহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
ঋণগ্রস্ত হয়ে বিনিয়োগ করা কাঁকড়া চাষি ও ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এক প্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে ঠিক, কি কারণে রপ্তানিমুখী এ পণ্যের ক্রয় বিক্রয় বন্ধ রয়েছে তার কোন সদুত্তর নেই কারও কাছে। অনেকে বলছেন সংশ্লিষ্ট কোম্পানী কাঁকড়া নেয়া বন্ধ করেছে। তবে তারাও ঠিক কি কারণে বন্ধ করেছে তা কেউ বলতে পারছে না।
তবে একটি সূত্র বলছে, দেশের অভ্যন্তরিন এজেন্সিগুলির মধ্যে সৃষ্ট জটিলতার কারণে উৎপাদনমুখী কাঁকড়া শিল্পের রপ্তানি প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এর কারণ হিসাবে অনেকেই ধারনা করছেন, মহামারী করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এ শিল্পের উপর রপ্তানিমুখী দেশগুলির আরোপিত বিধিবিধানসমূহ যথাযত না মানায় ঐসব দেশে কাঁকড়া সরবরাহ বন্ধ করা হতে পারে।
অনেকের মতে আমদানী ও রপ্তানিকারক এজেন্সিগুলির মধ্যকার নানা জটিলতায় বন্ধ রেখেছে সেসব দেশের কাঁকড়া সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলি। আর রপ্তানিকারক দেশগুলোর বিধিবিধান সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে কেউ কেউ দেশের অভ্যান্তরিন কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন। যার ফলে একদিকে এ পেশায় নিয়োজিত হাজার হাজার পরিবার যেমন অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তেমনই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রাজস্ব ফাঁকিতে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাঁকড়া রপ্তানিতে বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে বহিঃর্বিশ্বে। চিন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তাইওয়ানসহ বহুদেশে রপ্তানি হয় বাংলাদেশের লোনা পানির মিষ্টি কাঁকড়া। যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে বৃহৎ অংশে চাষিরা হ্যাচারীর মাধ্যমে উৎপাদন করে আসছেন রপ্তানিমুখী এ কাঁকড়া। এ শিল্পে জড়িত রয়েছে লাখ লাখ মানুষ। প্রান্তিক পর্যায়ে হাজার হাজার কাঁকড়া চাষি রয়েছে। যারা সরাসরি কাঁকড়ার উপর নির্ভরশীল।
উপজেলার মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, কাঁকড়ার উপর আন-অফিসিয়াল জরিপ মতে গত বছর পাইকগাছা উপজেলায় প্রায় ৪ হাজার মেট্রিকটন কাঁকড়া উৎপাদিত হয়েছে। যা বিশ্ববাজারে রপ্তানি করা হয়। চলতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারপরও বহুমুখী উৎপাদনের আশা রয়েছে কাঁকড়া চাষিদের।
এ পেশায় নিয়জিত পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের বাসিন্দা রামপদ পাল, সন্যাসী পাল, তপন পাল, বিশ্বজিৎ পাল, সত্যজিৎ মন্ডল, লিটন মন্ডল জানান, ঋনগ্রস্থ হয়ে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন তারা। এমতাবস্থায় কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় তারা রীতিমতো হতাশায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে ইতোমধ্যে আর্থিক সংকটে পড়েছেন। কিভাবে ঋনের টাকা পরিশোধ করবেন এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।
একই অবস্থা ডিপো মালিকদের, কপিলমুনি কাঁকড়া ব্যাবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও ডিপো ব্যবসায়ী শেখ আনারুল ইসলাম, মিলন দাশ, দেব কুমার, দিপঙ্কর নন্দি, বিপ্লব মন্ডল, শুশান্ত বৈরাগী, বাঁধন বাক্য প্রধান, অমিত মন্ডল বলেন, আমরা সকলে এ পেশায় জড়িত। মাঠ পর্যায় দাদনে পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়েছে তাদের। কিন্তু কোম্পানি থেকে কাঁকড়া নেয়া বন্ধ থাকায় তারাও দুশ্চিন্তা নিয়ে অলস সময় পার করছেন। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
এবিষয়ে পাইকগাছা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ জানান, সরকারিভাবে চিংড়ি উৎপাদন, বিপণনসহ বিশেষ করে চিংড়ি চাষের উপর সরকারী নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। কাঁকড়া উৎপাদনের ক্ষেত্রে নীতিমালা আমাদের নাই। আমরা আন-অফিসিয়ালী এটাকে মেইনটেইন করি। যদি কোন কাঁকড়া চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হন সেক্ষেত্রে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে সাহায্য থেকে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারবো।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে রপ্তানিমুখী কাঁকড়ার রপ্তানি বন্ধ হয়ে আছে। আমরা অফিসিয়ালি কিছু পায় নাই। অনেকে আমাদের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে রপ্তানী প্রক্রিয়ার বিষয়ে চাষি বা এ পেশায় নিয়োজিতদের দাবীর বিষয়ে লিখিত কোন কিছু পেলে তা সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
আনন্দবাজার/ইমদাদুল হক,