ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনের হঠাৎ নরম সুর, সতর্ক ভারত

লাদাখে উত্তেজনা প্রশমনের সময় ভারতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের বিবৃতি ভারত সাবধানী দৃষ্টিতে নিয়েছে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশকে একে অন্যের প্রতিপক্ষ নয় বরং সহযোগী হিসেবে ভাবতে হবে।

এই বিবৃতিতে ভারতের কৌতুহল বেড়েছে। কূটনৈতিক মহলে এই মুহূর্তের ভাবনা, অতীতের নিরিখে এই বিবৃতি শুধু মাত্র নরমই নয়, যথেষ্ট সমীহ উদ্রেককারীও বটে। এত রক্তক্ষয়ের পর এই বিবৃতি জারির মূল উদ্দেশ্য কী, সাউথ ব্লক আপাতত সেই ভাবনায় মগ্ন।

চীনা রাষ্ট্রদূত সুন উইডং শুক্রবার রাতে জারি করা ওই ভিডিও বিবৃতিতে জানান, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে সন্দেহ ও বিরোধ দেখা দিলে তা দ্রুত মিটিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। দুই দেশেরই পারস্পরিক বিশ্বাস বাড়ানো প্রয়োজন এবং সময়ে সময়ে কৌশলগত আলোচনাও করা জরুরি। পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠার আগেই দুই দেশের উচিত কথাবার্তা বলে সমস্যার সমাধান করে নেওয়া। দুই দেশকে বুঝতে হবে তারা একে অপরের সহযোগী। প্রতিপক্ষ বা প্রতিদ্বন্দ্বী না। চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, চীন মোটেই সম্প্রসারণবাদী যুদ্ধবিলাসী দেশ না। ভারত ও চীন দুই দেশের কাছেই শান্তি প্রাধান্য পাওয়া উচিত সংঘর্ষ নয়।

পূর্ব লাদাখে গালওয়ান উপত্যকায় দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এই মুহূর্তে দুই দেশই শান্তি প্রক্রিয়া চালু করেছে। সংঘর্ষ পরবর্তী সময়ে ভারত অবশ্য একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। যেমন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা উপস্থিতি বছরভর জোরদার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বায়ু সেনা ঘাঁটিগুলোয় বছরভর যুদ্ধকালীন সতর্কতা জারি রাখবে। ভারতীয় অর্থনীতির অতিরিক্ত চীন নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বহু প্রকল্প থেকে চীনা সংস্থা গুলোকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। বন্দরে বন্দরে চীনা পণ্য খালাসে অ–শুল্ক বাধা সৃষ্টি করছে। সবচেয়ে বড় কথা, চীন–বিরোধী আন্তর্জাতিক জোট জোরদার করতে ভারত আরও উৎসাহী হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নাম না করেও চীনা সম্প্রসারণবাদের সমালোচনা করছেন। এই পরিস্থিতিতে স্রেফ বানিজ্যিক স্বার্থ অক্ষুন্ন রাখতে চীনা রাষ্ট্রদূত এমন নরম বিবৃতি দিলেন কিনা সাউথ ব্লকে তা নিয়ে যাচাই বাছাই চলছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানা গেছে, এই বিবৃতিটি অতীত অভিজ্ঞতার নিরিখে খুবই সমঝোতা মূলক। সূত্র মতে, এর আগেও বেসরকারি স্তরে বিভিন্ন সংগঠন চীনা পণ্য বয়কট করার ডাক দিয়েছিল। তখন চীনা রাষ্ট্রদূত সংবাদ সম্মেলন ডেকে কড়া ভাষায় ভারতকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, চীনা পণ্য বয়কট করা হলে ভারতীয় অর্থনীতি ধসে যাবে। এবার সরকারি স্তরে বয়কট করার কথা বলা উঠলেও রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য নমনীয়। সূত্রটি মনে করছে, বিরূপ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করেই সুন উইডং এবার এই সতর্ক ও সমঝোতামূলক বিবৃতি দিয়েছেন যেন পরিস্থিতি আরো ঘোরালো না হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাংশের ধারণা, চীন এখানে মিশ্র ইঙ্গিত দিচ্ছে। গালওয়ানে ভারতের চেয়ে চীনের ক্ষতি ও প্রাণহানি বেশি হয়েছে। এই প্রথম তারা ভারতীয় সেনাবাহিনীর শক্তির ছোট্ট পরিচয় পেল। এটা তাদের বোধোদয়ের একটি বড় কারণ। গালওয়ানে পিছু হটতে ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে শান্তি স্থাপনে তাই তারা রাজি হচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে তারা নেপাল ও ভুটান মারফত ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই মহলের মতে, নেপালে ভারত বিরোধী প্রধানমন্ত্রী খড়্গ প্রসাদ শর্মা ওলিকে ক্ষমতায় রাখতে চীনা রাষ্ট্রদূত যা করছেন তা কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অদৃষ্টপূর্ব। আবার আচমকাই তারা ভুটানের পূর্ব সীমান্তের দাবি খুঁচিয়ে তুলেছে।

ভারতের কৌশল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় শক্তি ও নজরদারি জোরদার রাখা। অবকাঠামো নির্মাণে গতি ফেরানো। নেপাল ও ভুটান পরিস্থিতির দিকেও নজর রাখা। এবং আন্তর্জাতিক জোটবদ্ধতায় সক্রিয় অংশ গ্রহণের মধ্য দিয়ে চীনকে একটা চাপের মধ্যে রাখা। নেপাল সরকার হুট করে ভারতের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বন্ধ করে দিলেও ভারত এবিষয়ে কোনো মন্তব্য এখনো করেনি। ওই দেশে শাসক দলের অভ্যন্তরীণ কলহের পরিণতি কী হয় সাউথ ব্লক আপাতত তা দেখতে আগ্রহী।

আনন্দবাজার/তা.তা

সংবাদটি শেয়ার করুন