মহামারি করোনার এই সময়ে ঝুড়িতে করে গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলো ভারতের একটি রাজ্যে। এতেই বেরিয়ে পড়ল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা।
চলতি বছরে ভারত দাবি করছে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে তাদের। অথচ সেই আলোর নীচের অন্ধকার যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থেকে গিয়েছে। সম্প্রতি ছত্তিশগড়ের একটি ঘটনা সে কথাই আরও একবার মনে করিয়ে দিল।
ভারতের ছত্তিশগড় অন্য অনেক রাজ্যের থেকে অপেক্ষাকৃত ভাবে পিছিয়ে পড়া রাজ্য। দীর্ঘ দিন যাবত সেখানে নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন জনজাতির মানুষরা। কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ যে হচ্ছে না, তা প্রমাণিত হলো কোনডাগাঁও অঞ্চলে। এক গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিল পরিবার। দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও আসেনি অ্যাম্বুলেন্স।
প্রশাসন পরে জানিয়ে দেয়, ওই দুর্গম অঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছতে পারবে না। উপায়ন্তর না দেখে ভাঙা পাথর বয়ে নিয়ে যাওয়ার ঝুড়িতে সেই নারীকে বসিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছেন ওই নারী। তিনি এবং সদ্যোজাত দুইজনেই ভালো আছেন। তবে এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সাধারণ পরিষেবাটুকুও কি পেতে পারেন না দেশের লাখ লাখ সাধারণ, গরিব মানুষ?
গ্রামের মানুষ জানান, এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও অনেকবার এ ভাবেই গ্রাম থেকে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ বার তা সংবাদমাধ্যমের চোখে পড়ে যাওয়ায় এত আলোচনা হচ্ছে। বস্তুত, এর আগে এ ভাবে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। তারপরেও প্রশাসনের টনক নড়েনি।
প্রশাসনের লোকেরা জানায়, ওই গ্রামে পৌঁছনোর জন্য কোনও রাস্তা নেই। ফলে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছতে পারে না। গ্রামের মানুষের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন কখনওই তাঁদের কথায় গুরুত্ব দেয়নি।
শুধু ছত্তিশগড়ের কোনডাগাঁও নয়। ভারতের বহু গ্রামেই এই একই ছবি দেখতে পাওয়া যাবে। এর আগে কোলে করে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ছবি দেখেছেন ভারতের নাগরিকরা। দেখেছেন অসুস্থ শিশুকে কাঁধে নিয়ে বাবাকে হাঁটতে। এক একটি ঘটনা ঘটে, কিছুদিন আলোচনা হয়, তারপর সকলে সব ভুলে যান।
আনন্দবাজার/শাহী