ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিষেধক কতদূর?

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে এক রহস্যজনক ধরনের নিউমোনিয়া ছড়িয়ে পড়ে চীনের উহান শহরে।
ভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী সংক্রমিত হয়েছে এক কোটিরও বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ৫ লাখের বেশি। অন্যদিকে দিনরাত পরিশ্রম করে ভাইরাসটির প্রতিষেধক আবিষ্কারের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা।
বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত নভেল করোনাভাইরাসের ১৪৫ টিরও বেশি প্রতিষেধক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন গবেষকরা। এর মধ্যে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর্যায়ে যেতে পেরেছে মাত্র ২১টি প্রতিষেধক। সাধারণত মানবদেহে ব্যাপক হারে প্রয়োগের উপযুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার আগে যেকোনো ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধককে কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারীর চলমান অবস্থায় এতটা সময় মানবজাতির হাতে নেই। তাই আগামী বছরের আগেই ব্যাপক মাত্রায় নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন উৎপাদনে যেতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।
ভ্যাকসিন নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ প্রাণান্তকর প্রয়াসের সূচনা হয় গত জানুয়ারিতে। চীনা বিজ্ঞানীদের সার্স-কোভ-২ বা নভেল করোনাভাইরাসের জিনোম রহস্য উদ্ঘাটনের মধ্য দিয়ে প্রতিষেধক উদ্ভাবনের কাজ শুরু হয়। মানবদেহে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ প্রথম শুরু হয় মার্চে, যদিও সে সময় এ প্রয়াসকে সামনে এগিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে বেশ অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন বিজ্ঞানীরা।
স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সফলতা নাও আসতে পারে। এমনকি নানা কারণে স্পষ্ট কোনো ফল অর্জনের আগেই থেমে যেতে পারে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের সকল কার্যক্রম। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম অ্যান্টিবডি তৈরিতে নেয়া অনেক প্রয়াসের মধ্যে সফল হতে পারে কয়েকটি মাত্র।
কোনো ভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করার সাথে সাথেই তা ব্যবহার করা যায় না। প্রতিষেধক তৈরির পর সেটিকে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। নাহলে তা মানবদেহে ব্যাপক হারে প্রয়োগ করার বিষয়টি বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে।
গবেষণাগারে তৈরীকৃত ভ্যাকসিন মানবদেহে ব্যবহারের স্বীকৃতি পেতে হলে প্রথম যে ধাপটি অতিক্রম করতে হয়, তাকে বলে প্রিক্লিনিক্যাল টেস্টিং। এ পর্যায়ে বিজ্ঞানীদের ইঁদুর বা বানরের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে দেখতে হয়, এটি আসলে সংশ্লিষ্ট ভাইরাসটির বিরুদ্ধে দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে কিনা। প্রথম ধাপে সফল হওয়ার পরই তা পরবর্তী ধাপে প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পরের ধাপটিকে বলা হয় ফেজ ১ সেফটি ট্রায়ালস। এক্ষেত্রে অল্প কিছু মানুষের ওপর ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করে এর নিরাপদ ব্যবহার ও ডোজের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে তা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সক্রিয় করে তুলতে সক্ষম কিনা, সেটিও এ ধাপে নিশ্চিত করতে হয়।
এভাবেই পর্যায়ক্রমে পরীক্ষামূলক এসব পর্যায়ের ফলাফল যাচাই-বাছাইয়ের পরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিষেধকটি বাজারে উন্মুক্ত করার অনুমোদন দিতে পারে। তবে মহামারীকালীন জরুরি অবস্থায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার আগেই বাজারে প্রতিষেধক ছাড়ার অনুমতি দিতে পারে কর্তৃপক্ষ, তবে সেক্ষেত্রেও প্রত্যেক পর্যায়ের ফলাফল যাচাই-বাছাই করার বিষয়টি অপরিহার্য।
এছাড়া মহামারীকালে ভ্যাকসিন যত দ্রুত সম্ভব উদ্ভাবনের স্বার্থে বর্ণিত ধাপগুলোর কয়েকটিকে একসাথে সমন্বিতভাবে প্রয়োগ করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নভেল করোনাভাইরাসের কয়েকটি প্রতিষেধক এখন একই সাথে ফেজ ১ ও ফেজ ২-এর কার্যক্রম সম্পন্ন করছে, যেখানে প্রিক্লিনিক্যাল টেস্টিং বা ইঁদুর/বানরের ওপর প্রয়োগের পরবর্তী পর্যায়েই কয়েকশ মানুষের ওপর ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠানগুলো।
আনন্দবাজার/তা.তা

সংবাদটি শেয়ার করুন