ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে ঠেলে, চীনকে কাছে টানছে ইউরোপ!

৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ট্রান্স-আটলান্টিক জোট মিলে অটুট এক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল, যার ওপরই গড়ে উঠেছে উন্নত এক ইউরোপের ভিত্তি। এবং বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্ব স্থাপনের লড়াইয়ে নেতৃত্বও দিয়েছে পশ্চিমা সামরিক-রাজনৈতিক জোট, যার নেতৃত্বে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই অটুট সম্পর্কে  ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ২০২০ সালে এসে ব্যাপক অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়েছে আটলান্টিকের দুই পাড়ের এই সম্পর্ক।

করোনাভাইরাস রাজনীতি, অর্থনীতিসহ বিভিন্নভাবে সারা বিশ্বকে বদলে দিচ্ছে। গেল সপ্তাহে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকা থেকে বাদ দেয় যুক্তরাষ্ট্রকে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে করোনার প্রভাব না কমায় অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপে আমেরিকানদের স্বাগত জানানো হবে না। যদিও বিতর্কিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে এ তালিকায় রেখেছে ইউরোপ, যে চীনেই করোনা উৎপত্তি। এখানে ইউরোপ এবং চীনের পারস্পরিক সমঝোতা রয়েছে।

বিগত কয়েক বছর ধরে ট্রাম্পের আচরণও এই সম্পর্কে ফাঁটল ধরানোর পেছনে অবদান রেখেছে। প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলন, ইরানের নিউক্লিয়ার চুক্তি, ফাইভজি নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্পের খামখেয়ালি আচরণ ইউরোপকে ক্ষুব্ধ করেছে। ফলে তারা পুরনো বন্ধুকে পাশে রেখে চীনের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে চাইছে।

এই ব্যাপারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কূটনীতি নিয়ে কাজ করা এক কর্মকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, ভূ-রাজনীতিতে ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এই দূরে চলে যাওয়ার সূচনা অবশ্য আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ই। তার মতে, ওবামা মধ্যপ্রাচ্যের যতটা কাছাকাছি এসেছিলেন তা অতীতের অন্য কোনো প্রেসিডেন্ট করতে পারেননি। তিনি ইউরোপের চেয়ে চীন এবং এশিয়ার ওপর অগ্রাধিকার দিতে শুরু করেন।

তবে অনেকেই মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের সম্পর্ক ভাঙার মূলে ট্রাম্প। এর আরো পতন ঘটবে যদি জো বাইডেনকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পুনর্নির্বাচিত হন ট্রাম্প। অস্ট্রিয়ান ইনস্টিটিউট ফর ইউরোপিয়ান অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসির ভেলিনা চাকারোভা জানান, ইউরোপ, বিশেষ করে জার্মানিকে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন ট্রাম্প। অর্থাৎ দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে এ নিয়ে উত্তেজনা অনেক বেড়ে যাবে।

ট্রাম্প হাঁটছেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে, এবং ইউরোপ এখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব থেকে বেরিয়ে এসে বিশ্বে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করতে চাইছে। ঠিক এ কারণেই আটলান্টিকের দুই পাড়ের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্কের পতন দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

আনন্দবাজার/এইচ এস কে

সংবাদটি শেয়ার করুন