চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে মহামারি সৃষ্টি করা করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। করোনাভাইরাসজনিত রোগ কভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা এই মাইলফলক পার হয়। এর আগের দিন বিশ্বে এ ভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যায়।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ১ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত গড়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ৭০০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যু হয়েছে কভিড-১৯ এ। সেই হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় ১৯৬ জন বা প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হচ্ছে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে মাত্র সাত মাসে সে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা এক বছরে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যুর প্রায় সমান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ওই বছর এইডস রোগে গড়ে প্রতি মাসে ৬৪ হাজার জনের আর ম্যালেরিয়া ৩৬ হাজার জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে কোভিড-১৯ এ গড়ে প্রতি মাসে মৃত্যু হচ্ছে ৭৮ হাজার জনের।
নতুন এ করোনাভাইস শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায় যা বিশেষভাবে বয়স্কদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক, তবে মৃতদের মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ও শিশুরাও রয়েছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মোট মৃত্যুর হার কমে এলেও যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ব্রাজিলের রেকর্ড সংখ্যক নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হতে থাকায় এবং এশিয়ার কোনো কোনো অংশে নতুন করে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ জানিয়েছেন।
এ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশ যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে। এই দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো লকডাউন শিথিল করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা ফের হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে।
লাতিন আমেরিকায় শনাক্ত রোগীর মোট সংখ্যা রোববার ইউরোপে শনাক্ত রোগীর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। এতে অঞ্চলটি উত্তর আমেরিকার পর মহামারীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হয়ে দাঁড়ায়।
নতুন ভাইরাসটিতে প্রথম মৃত্যু নথিবদ্ধ হয়েছিল ৯ জুন চীনের উহানে। শহরের একটি কাঁচা বাজারের নিয়মিত ক্রেতা ছিলেন ৬১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি। এই কাঁচা বাজারটিই নতুন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের উৎস হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।
এরপর বিশ্বজুড়ে মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা অত্যন্ত প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ ম্যালেরিয়ার বার্ষিক মৃত্যুর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যায়। এরপরও এসব পরিসংখ্যানে সম্ভবত মহামারীর পুরো চিত্রটি উঠে আসছে না বলে ধারণা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। অনেক দেশেই প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নথিবদ্ধ আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে বেশি বলে মনে করেন তারা।
আনন্দবাজার/শাহী