ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পিপিই রপ্তানিতে স্বস্তি পোশাক শিল্পে

করোনা মহামারিতে পশ্চিমা নানা ব্র্যান্ড একের পর এক অর্ডার বাতিল করেছে৷ এর ফলে ধস নেমে এসেছে বাংলাদেশের গোটা তৈরি পোশাক খাতে৷ তবে কিছু কিছু কারখানা এ ধাক্কা সামলাচ্ছে মাস্ক, গ্লাভস, গাউন তৈরি ও রপ্তানি করে৷

নতুন অর্ডার স্বল্প পরিমাণে আসতে শুরু করেছে৷ এরপরও লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক এখনও রয়েছে চাকরির অনিশ্চয়তায়৷ অন্যদিকে, সাভারের শিল্প এলাকায় কিছু কারখানায় সপ্তাহে ছয় দিন আট ঘণ্টা করে এখনও কাজ করছেন লাখ লাখ কর্মী৷ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট- পিপিই৷

বাংলাদেশের পোশাক খাতে একটি বড় নাম বেক্সিমকো৷ জারা, কেলভিন ক্লাইন এবং টমি হিলফিগারের মতো বড় বড় ব্র্যান্ডের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হলো এই বেক্সিমকো৷ কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি স্থবির হওয়ার পর এখন বেক্সিমকোর কারখানায় নীল-সাদা গাউনের ছড়াছড়ি৷

প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ নাভেদ হুসাইন জানান, ‘ফেব্রুয়ারি মাসেই আমরা এই সুযোগ আসবে বুঝতে পেরেছিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গেই পিপিই তৈরিকে বিকল্প হিসবে বেছে নিয়েছিলাম।

গত মাসে বেক্সিমকো মার্কিন ব্র্যান্ড হানেসের কাছে রফতানি করেছে প্রায় ৬৫ লাখ মেডিকেল গাউন৷ এ বছর প্রায় ২৫ কোটি ডলার মূল্যের পিপিই রপ্তানির লক্ষ্য রয়েছে তাদের।

মহামারির আগে দেশের ৪০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির ৮০ শতাংশই আসতো তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে৷ ৪০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করতো এই খাতে, যাদের অধিকাংশই গ্রামের দরিদ্র পরিবার থেকে আসা নারী৷

কিন্তু এপ্রিল মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শুরুর পর থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কারখানার ৮৪ শতাংশ সরবরাহই বন্ধ হয়ে যায়৷ এ সময়ে প্রায় ৩২ লাখ ডলারের অর্ডার বাতিল বা স্থগিত হয়েছে বলে জানায় পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ৷

অর্ডার বাতিল ও নিজ দেশের লকডাউনের কারণে পর্যাপ্ত কাজ না পাওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেছে বেশিরভাগ কারখানা৷ এর প্রতিবাদের বেশ কয়েকটি বিক্ষোভেও অংশ নেন পোশাক শ্রমিকরা৷

বিজিএমইএর মুখপাত্র খান মনিরুল আলম শুভ জানিয়েছেন, এখন আবার অর্ডার ধীরে ধীরে আসতে শুরু করেছে৷ তিনি বলেন, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এই পরিমাণ খুবই নগণ্য৷ জুন মাসে আমরা আমাদের সক্ষমতার কেবল ৫৫ শতাংশ কাজ করতে পেরেছি৷

কারখানায় কাজ শুরু হয়ে গেলেও সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক পরার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হচ্ছে কারখানাগুলোকে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারখানা মালিক জানিয়েছেন, ‘এটা এমন একটা কাজ যে এখানে সামাজিক দূরত্ব মানাটা প্রায় অসম্ভব৷’

বিজিএমইএ বলছে, কারখানাগুলো মেডিকেল সামগ্রী তৈরি করার দিকে নজর দেয়ায় দেশীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটতে পারে৷ শুভ জানিয়েছেন মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০টি কারখানা পিপিই উৎপাদন করছে৷ এ সংখ্যাও খুব দ্রুতই বাড়ছে বলেও জানান তিনি৷

যেসব কারখানা সীমিত আকারে পিপিই তৈরি করা হচ্ছিল, তাদের অর্ডার বাড়তে থাকায় কারাখানায় কাজ বাড়াতে হচ্ছে৷ তহবিল-আইএমএফ এর সাবেক নির্বাহী আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে এখন কেবল তাদের সক্ষমতার ৫০ ভাগ কাজ করছে৷ ফলে পিপিইর অর্ডার আসতে শুরু করায় এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি৷

আনন্দবাজার/তা.তা

সংবাদটি শেয়ার করুন