গ্যালাক্সি থেকে বিচ্যুত রশ্মির (এক্স-রে) পেছনে ধাওয়া করে গ্যালাক্সি ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্য ভেদের আশায় গবেষকরা নতুন অভিযান শুরু করেছে গেল বছর জুলাই মাসে। জার্মানি ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে মহাকাশে স্পেক্টর-আরজি নামের উচ্চশক্তির স্যাটলাইটে পাঠানো হয় ই-রোসিটা এক্স-রে টেলিস্কোপ।
আশা ছিল তাতেই ধরা পড়বে গ্যালাক্সিগুলোর মানচিত্র, সহজ হবে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের পরিমাপ কাজও। অভিনব এই অভিযান শুরুর ঠিক ১১ মাসের মাথায় পাওয়া গেল অভাবনীয় সফলতা। প্রথমবারের মতো মহাকাশের এক্স-রে মানচিত্র পাওয়া গেল ই-রোসিটা এক্স-রে টেলিস্কোপের সৌজন্যে।
বিবিসি বলছে, জার্মান-রাশিয়ান স্পেস টেলিস্কোপে মহাকাশের যুগান্তকারী যে মানচিত্র বা নকশা ধরা পড়েছে, তা রীতিমতো স্বর্গের দৃশ্য আবিষ্কারের মতোই ঘটনা। ছবিটিতে নভোমণ্ডলের তীব্র অনেক বস্তুগত প্রতিক্রিয়াকে রেকর্ড করেছে, যেখানে পদার্থগুলো দ্রুতগতি, উত্তপ্ত হওয়া এবং সংকুচিত হওয়ার মতো বিষয়গুলো দেখা গেছে। ব্ল্যাকহোলগুলোর অন্যান্য বস্তু আহরণ, তারার বিদীর্ণ হয়ে যাওয়া এমনকি উত্তম গ্যাসের শিখাও উঠে এসেছে নৈসর্গিক মানচিত্রটিতে।
মানচিত্রটির আইটফ প্রজেকশন থেকে দেখা যাচ্ছে, আকাশের গোলাকার পরিমণ্ডলটিকে এটি উপবৃত্তাকারে প্রকাশ করেছে। মাঝখান জুড়ে ব্যান্ডটি হলো মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সমতল, উপবৃত্তের মাঝখানে রয়েছে গ্যালাক্সির কেন্দ্র।
ছবিটিতে আলোর রং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সম্প্রসারণের গতি নির্দেশ করেছে। গবেষকরা বলছেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কী ঘটছে বা ঘটতে যাচ্ছে, তারও নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে আলোর রঙে। তারা বলছেন, আলোর নীল রং এক্স-রের তীব্র শক্তির মাত্রা নির্দেশ করে। এই আলোর শক্তির মাত্রা ১ থেকে ২ দশমিত ৩ কিলোইলেকট্রন ভোল্ট। সবুজ আলো নির্দেশ করে মাঝারি মাত্রার শক্তি, যা দশমিক ৬ থেকে ১ কিলোইলেকট্রন ভোল্টের শক্তিমাত্রা নির্দেশ করে। আর লাল আলো দশমিক ৩ থেকে দশমিক ৬ কিলোইলেকট্রন ভোল্টের শক্তিমাত্রা নির্দেশ করে।
স্যাটেলাইটটিকে পর্যবেক্ষণ করা জার্মানির ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরিস্টোরিয়াল ফিজিকসের (এমপিই) একটি দলের প্রধান ক্রিপাল নন্দ্র বলেন, ৬০ বছরের পেছনে চলে যাওয়ার মতো এক্স-রে জোতির্বিদ্যার পুরো ইতিহাস জানতে আমরা একই সংখ্যার সন্ধান পেয়েছি। ছয় মাসের মধ্যে আমরা জানা উৎসগুলো আরও দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছি।
আনন্দবাজার/শহক