পিরোজপুরের মাটি বিভিন্ন জাতের ফলজ ও বৃক্ষের জন্য ইতিমধ্যে ব্যপক পরিচিতি পেয়েছে।এই জেলার স্বরুপকাঠির পেয়ারা, মাল্টা,আম,লিচুসহ বিভিন্ন ফল স্থানীয় চাহিদা পুরন করে বিক্রি হচ্ছে সারাদেশে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার নাজিরপুর উপজেলায় এবছর লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে লিচু কিনতে বাহির থেকে পাইকাররা আসতে না পারায়, লিচু চাষীদের উৎপাদন খরচ উঠবে কী-না তা নিয়ে চিন্তিত চাষিরা। আর ক্ষতিগৃস্থ চাষিদের সকল সহযোগিতার কথা বলছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
পিরোজপুর জেলার উত্তরের জনপদ নাজিরপুর উপজেলার বেশকিছু গ্রামে বিভিন্ন জাতের লিচু, সুস্বাদু আম, মাল্টা ও কলাসহ নানা ধরনের ফল-ফলাদির বাগান রয়েছে। এ উপজেলাটি মূলত; বিভিন্ন জাতের ফলজ বৃক্ষের জন্য ইতিমধ্যে ব্যপক পরিচিতি পেতে শুরু করেছে। এখানের আবহাওয়া, পরিবেশ, মৃত্তিকা ও জলবায়ু এসব ফল চাষের জন্য আশীর্বাদ বলছেন চাষীরা। ধানী জমিতে বিশেষ পদ্ধতিতে বের কেটে মাটি উঁচু করে বেরের চারিপাশে সারি সারি লিচু গাছ। কৃষকদের আগ্রহের কারনে নাজিরপুরের শত শত একর জমিতে প্রতিবছর গড়ে উঠছে বিভিন্ন জাতের লিচুসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদির বাগান। ধানসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফলজ বাগানে অন্তত তিনগুন লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা তাই এ আবাদে ঝুকছেন প্রতিবছর।
প্রতিবছর এ উপজেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ফল কিনতে ও বাগান দেখতে ব্যাপারী,পর্যটক,পরিবেষবিদরা আসলেও করোনা মহামারিতে প্রায় বন্ধ রয়েছে সকল যোগাযোগ।এতে লিচু চাষীদের কপালে বয়েছে চিন্তার ভাজ। এদিকে লিচু ব্যবসায়ীরা বলছেন,প্রতিবছর লিচুর চাহিদা বেসি থাকলেও করোনা কারনে এবছর অনেকটাই লোকসানের দিকে তারা।
জেলায় এবছর ৪২ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের দাবী, নাজিরপুর অঞ্চলের কৃষকদের জন্য সরকারের বিশেষ প্রনোদনা ও সহজ শর্তে ব্যাংক ঋন পেলে অত্র উপজেলায় আরও আগ্রহী কৃষক তৈরী হবেন এবং ফল চাষে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি হবে।
লিচুর বাগান চাষির সাথে কথা বললে তিনি জানান, গতবছর খরচ করলাম ১ লক্ষ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। উৎপাদন আগের থেকে ভালো কিন্তু দেশের যে বর্তমান পরিস্থিতি তাতে বিক্রি কিভাবে হবে জানিনা। পাইকার ক্রেতারা আসে না বললেই চলে, খুচরা যারা আসে তাদের কাছে প্রতি কুড়ি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা করেই বিক্রি করতে হয়।
খুচরা ব্যবসায়ী জানান, জেলায় লিচুর খুব চাহিদা আছে। প্রতি কুড়ি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা করেই আমরা কিনে থাকি। ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু দাম কম।
সাধারণ ক্রেতা জানান, আমাদের পিরোজপুরে যে লিচু হয় সেগুলো খুব মিষ্টি। গত বছর ও লিচু কিনেছি ৩০০ টাকায় এবছর সেই লিচুই ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় কিনছি।
এক দর্শনার্থী জানান, আগে পিরোজপুরে আনেক জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকতো। বর্তমানে লিচু চাষীরা এই জামিগুলোকে কাজে লাগিয়ে যে লিচু বাগান তৈরি করছে তাতে চাষীরা লিচু বিক্রি করে লাভবান হবে আর আমাদের চিত্ত বিনোদনের একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। এছাড়া পিরোজপুরের মাটি লিচু চাষের জন্য ভালোই মনে হচ্ছে।
এদিকে নাজিরপুরে চলতি মৌসুমে লিচু ও আমসহ অন্যান্য ফলের উৎপাদন আশাব্যঞ্জক হওয়ার পরও হাসি নেই কৃষকের মূখে। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবে জেলার বাহির থেকে পাইকার না আসায় স্থানীয় পাইকারদের উপর তারা ভরসা করে পানির দামে বিক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন উৎপাদিত লিচু। তবে ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের পাশে থাকার কথা জানান উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা।
নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দিগবিজয় হাজরা জানান, বর্তমানে করোনার কারনে দেশে যে দূর্যোগময় অবস্থা বিরাজ করছে এর মাঝেও চাষী ভাইরা এ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। করোনা না থাকলে আশ পাশের জেলা গুলো থেকে পাইকার ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা লিচু কিনতে ও দেখতে আসতেন। তবে লিচু আমরা স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রয় করার ব্যবস্থা করছি। চাষীরা যাতে কোন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয় আমরা তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। গত বছরের তুলনায় এবছর অনেক ভালো ফলন হয়েছে।
আনন্দবাজার/এফআইবি