ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘বুমেরাং’ ও ‘আগস্ট ১৪’ সিরিজ নিয়ে কেন এত সমালোচনা!

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক উসকে দেয়া ওয়েব সিরিজগুলোর মধ্যে সিনিয়র চিত্রনির্মাতা ওয়াহিদ তারিকের ‘বুমেরাং’ আর শিহাব শাহীনের ‘আগস্ট ১৪’ নিয়ে অভিযোগের পাল্লাটা একটু বেশিই ভারী। এ দুটি সিরিজের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে আপত্তিকর দৃশ্যগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দিয়েছেন তিনি। এরপর থেকেই সিরিজ দুটি নিয়ে কৌতুহল বেড়েছে নেটিজেনদের।

গত ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনিয়র নির্মাতা ওয়াহিদ তারেকের ওয়েব সিরিজ ‘বুমেরাং’ মূলত ‘বিয়ে বহির্ভুত’ যৌনতার গল্প নিয়ে নির্মিত। ছোট পর্দায় যারা নাটক দেখে অভ্যস্ত সেই দর্শকরা দেখেই চমকে যাবেন। হিল্লোল আর অর্ষার শয্যা দৃশ্য দেখে চোখ কপালে গিয়ে ঠেকতে পারে। সিরিজটিতে বেশ কিছু চুম্বন আর যৌন বা শয্যা দৃশ্য রয়েছে। মূলত সেই দৃশ্যগুলোর স্ক্রিনশট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরই বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার অনেকের মন্তব্য, এসব গল্প কিংবা দৃশ্য আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের সাথে বেমানান। তরুণপ্রজন্ম এতে করে আরো বখে যেতে পারে। যদিও অনেকে জানিয়েছেন, নেটফ্লিক্স কিংবা হৈচৈ সিরিজ দেখে দেখে অভ্যস্ত অনেকেই। তাই এসব সিরিজ নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। সিরিজে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় ও অতি পরিচিত অভিনয়শিল্পী মৌটুসী বিশ্বাস, শ্যামল মওলা, ইমিসহ অনেকে।

তবে মৌটুসী বিশ্বাস জানিয়েছেন, এটি নাটক নয়, ওয়েব সিরিজ। নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে সাবস্ক্রাইবেশন ফি দিয়ে দেখার কথা ছিল। ইউটিউবের মতো ওপেন প্লাটফর্মে প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল না। তিনি আরো জানান, এটা ১৮+সিরিজ। প্রাপ্তবয়স্করা এ ধরনের কাজ নিয়মিতই দেখছে।

নির্মাতা ওয়াহিদ তারেক জানান, আমরা গল্পের বাইরে কিছুই দেখাইনি। যে যেভাবে দেখবেন, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি গল্পের বাইরে গিয়ে কোনো অশ্লীলতা দেখাইনি।

বুমেরাং

অন্যদিকে, ঐশী নামের বখে যাওয়া মেয়ের হাতে ২০১৩ সালের ১৪ আগস্ট পুলিশ কর্মকর্তা বাবা আর মাকে খুন হওয়ার ঘটনা সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। ঐশীর মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে তখন থেকেই অনেক আলোচনা ও বিশ্লেষণ হয়েছে। জনপ্রিয় নির্মাতা ও পরিচালক শিহাব শাহীন সেই ঘটনা অবলম্বন করেই নির্মাণ করেছেন ক্রাইম থ্রিলার ‘আগস্ট ১৪ ওয়েব’ সিরিজটি। গত ২৭ মে অনলাইনে মুক্তি পায় সিরিজটি।

আগস্ট ১৪

সিরিজটির শুরুতে কাহিনির পেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। মানুষের মনস্তাস্তিক বিষয়ের বিশ্লেষণও প্রাসঙ্গিকভাবে করা হয়। সেই সাথে সিরিজটি যে ১৮ বছরের কম বয়সী দর্শকের জন্য নয় সেটাও জানানো হয়েছে।

সিরিজের তুশি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাসনুভা তিশা। বাসায় তুশির একা পর্নোছবি দেখার মুহূর্ত, বন্ধুদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কসহ নানা আপত্তিকজনক দৃশ্যও রয়েছে এতে। রয়েছে কিছু অশ্লীল শব্দ বা গালির প্রয়োগ। আর এমন চরিত্রে একেবারেই সাবলীল দেখা গেছে তাসনুভাকে। যা কখনও ভাবতেই পারেননি সাধারণ দর্শক। এতে আরো অভিনয় করেছেন মূলধারার জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী শহীদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনিরা মিঠুসহ অনেকে।

আগস্ট ১৪

তাসনুভা জানিয়েছেন, গল্পের বাইরে সিরিজটিতে কিছু ছিল না। ভাষার ব্যবহার বা অন্য যাই বলিনা কেন, সেগুলো চরিত্রের জন্য করতে হয়েছে। এখানে কেউ নেগেটিভ কিছু বললে বলতেই পারেন। তাতে কিছু যায় আসে না। যারা নিন্দা করার তা করবেই। যেকোনো কারণেই তারা নিন্দা করবে।

তবে নির্মাতা শিহাব শাহীন জানিয়েছেন, দর্শকদের প্রলুব্ধ করার জন্য কোনো স্কিন শো করিনি। সিরিজটিতে চরিত্রের প্রয়োজনেই গালি দেয়ার বিষয়টা এসেছে। তবে গালি কিন্তু একটা চরিত্রই দেয়। সেটা তুশি চরিত্র। সাইকোলজিক্যালি সে অস্থির। ভিন্ন পরিবেশ মিশে তার ভাষা বদলে গেছে।

আগস্ট ১৪

উল্লেখ্য, অনলাইন প্লাটফর্মে প্রকাশ হওয়া ‘বুমেরাং’ ও ‘আগস্ট ১৪’ ওয়েব সিরিজ থেকে অশ্লীল দৃশ্য অপসারণ করতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। গত ১৪ জুন তিনি তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পরিচালক, আইজিপি, সিআইডির উপ-মহাপরিদর্শক বরাবর ইমেইলে চিঠিটি পাঠান। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অশ্লীল দৃশ্য সরিয়ে ফেলতে জানানো হয়েছে। তবে এখন অবধি সেসব দৃশ্য সরানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন