নূর মোহাম্মদ। বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোল্লাপাড়া গ্রামে। লেখাপড়া করেছেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। বরেন্দ্র ভূমিতে প্রতিবছরই খরায় নষ্ট হওয়ায় সেই ধান রক্ষা করতেই একের পর এক কাজ করে যান তিনি। এতে নিজের মাটির ঘরটাকে বানিয়ে ফেলেছেন হারানো ধানের গবেষণাগার।
চলতি বোরো মৌসুমে নূর তার এলাকায় ছোট ছোট অনেকগুলো সাইনবোর্ডে টানিয়ে একটি ধান ক্ষেতের প্লট তৈরি করেছেন। যেখানে রয়েছে বেগুনি, সোনালী, সবুজ, খয়েরি, সাদাগুঠিসহ নানা রকমের ধান। শুরুতেই এটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের কোন প্রর্দশনী প্লট মনে হলেও কিন্তু এটি কৃষক নূর মোহাম্মদের নিজস্ব ধান গবেষণার প্রদর্শনী প্লট। এ প্লটিতে এই মৌসুমে প্রায় ৩৭ প্রকারে জাতের ধান সঙ্করায়নের মাধ্যমে নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন তিনি।
জানা যায়, প্রান্তিক কৃষক নূর মোহাম্মদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো সনদ নেই। এর পরেও ধান নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন চিন্তা আছে তার। সঙ্করায়ণ করে একের পর এক নতুন ধান উদ্ভাবন করছেন তিনি। স্বশিক্ষিত এই বিজ্ঞানীর কাজ আমলে নিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরাও। ধানগুলো জাত হিসেবে স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে এই কৃষক। এছাড়াও নতুন ধান ও প্রায় বিলুপ্ত ধান মিলে নূর মোহাম্মদের কাছে সংরক্ষণ করা আছে এমন ধানের জাতের সংখ্যা ৩০০টি। সর্বশেষ তিনি একটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন।
নূর মোহাম্মদের দাবি, দেশে প্রচলিত বোরো ধান বপন থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত ১৪০ দিন লাগে। তার উদ্ভাবিত এই ধান বোরো মৌসুমে বপন থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে কাটা যাবে।
তিনি জানান. চলতি বোরো মৌসুমে তার এক একর জমিতে ৩৭ জাতের ধান সঙ্করায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছেন। এগুলো এখন পাক ধরেছে। কিছু কর্তন শুরু হয়েছে। ধানের শুধু নম্বর প্লেট দেয়া রয়েছে। ক্ষেতের এসব ধান কৃষি কর্মকর্তারা দেখে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করবেন। কোন কোন জাতকে স্বীকৃতির দেয়া হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃদষিবিদ শামিমুল ইসলাম বলেন, স্বশিক্ষিত ধান গবেষক নূর মোহাম্মদ তানোর উপজেলার গর্ব। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রজাতির ধান নিয়ে নিজে থেকেই কাজ করছেন। কৃষি অফিস সবসয়ই নূর মোহাম্মদকে সবধরনের সহযোগিতা করে আসছে।
আনন্দবাজার/শহক