পবিত্র কাবা শরিফের পরেই গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র নিদর্শন মসজিদে নববী। আল-মাসজিদুন-নাবি অর্থাৎ নবির মসজিদ। রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর মসজিদে নববীকে কেন্দ্র করেই বিকশিত হয়েছিল ইতিহাসের প্রথম মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার।
মদিনায় হিজরত করার পর কুবা এলাকায় যাত্রাবিরতি দেন রাসুলে আকরাম (সা.)। সেখানে চার দিন অবস্থানকালে একটি মসজিদও নির্মাণ করেন। কুবা থেকে বিদায় নিয়ে তিনি বর্তমান মসজিদে নববীর এলাকায় এসে স্থায়ী হন এবং মসজিদ নির্মাণ করেন।
তৎকালীন সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এই মসজিদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পর খোলাফায়ে রাশেদার যুগ পর্যন্ত মসজিদে নববীই ছিল ইসলামী খিলাফতের প্রাণকেন্দ্র। এখান থেকে মুসলিম বিশ্ব পরিচালিত হতো।
রাসুলে আকরাম (সা.)-এর হাতে মসজিদে নববীর প্রতিষ্ঠা হলেও যুগে যুগে বহু সংস্কার ও সম্প্রসারণ হয়েছে এই মসজিদের। ফলে প্রতিষ্ঠাকালীন আয়তন এক হাজার ৫০ স্কয়ার মিটার থেকে বেড়ে বর্তমানে দুই লাখ ৩৫ হাজার স্কয়ার মিটারে দাঁড়িয়েছে।
নির্মাণ : খেজুর গাছের খুঁটি দিয়ে ছাদের কাঠামো ধরে রাখা হয়। ছাদ তৈরি করা হয় খেজুর পাতার আস্তরণ দিয়ে। সে সময় মসজিদটির উচ্চতা ছিল ৩.৬০ মিটার। দরজা ছিল তিনটি। দক্ষিণে বাব-আল-রহমত, পশ্চিম দিকে বাব-আল জিবরিল এবং পূর্বদিকে বাব-আল-নিসা।
সবুজ গম্বুজ : মসজিদের দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থিত সবুজ গম্বুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটি ছিল আয়েশা বিনতে আবু বকরের (রা.) বাড়ি। ১৮৩৭ সালে প্রথম এই মসজিদের গম্বুজটিতে সবুজ রং করা হয়।
সংস্কার ও সম্প্রসারণ : এই মসজিদটিও বহুবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। খায়বারের যুদ্ধের পর মসজিদ সম্প্রসারণ করা হয়। প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের (রা.) শাসনামলে মসজিদের আকার অপরিবর্তিত থাকলেও দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) মসজিদ সম্প্রসারণ করেন। এরপরে উমাইয়া, আব্বাসীয় ও উসমানীয় যুগেও করা হয় সংস্কার। সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পরও মসজিদের বেশ কয়েক দফা সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। মসজিদটিতে বর্তমানে ৬ লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে হজের সময় সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ লাখে।
স্থাপনা : রওজায়ে জান্নাত বা রিয়াদুল জান্নাত। মসজিদের মধ্যেই ছোট কিন্তু বিশেষ এলাকা। এটি মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা থেকে তার মিম্বর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই জায়গা বেহেশতের বাগান নামেও পরিচিত।
রওজা মসজিদের সঙ্গে অবস্থিত। এখানে মুহাম্মদ (সা.) এবং প্রথম দুই খলিফার কবর রয়েছে। জানা যায় এর পাশে একটি কবরের জন্য খালি জায়গা রয়েছে। ইসলাম ধর্মমত অনুযায়ী ঈসা (আ.) পৃথিবীতে আবার ফিরে আসবেন এবং মারা যাওয়ার পর তাকে এখানে দাফন করা হবে।
এই মসজিদে তিনটি মিহরাব রয়েছে। এর মধ্যে একটি মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় নির্মিত হয়। বাকিগুলো পরবর্তী সময়ে নির্মিত। রয়েছে মিম্বর। মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক মূল মিম্বরটি খেজুর গাছের কাঠ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। পরে এর স্থলে অন্য মিম্বর বসানো হয়।
আনন্দবাজার/শহক