ঢাকা | রবিবার
২৩শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবনযুদ্ধে হার না মানা একজন স্বপ্নার গল্প

স্বপ্না চাকমা। চট্রগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া মাষ্টার দা সূর্য্যসেন পল্লী গ্রামের মেয়ে। নিয়তির নির্মম পরিহাসে ১৯৯৮ সালে আক্রান্ত হন কুষ্ঠ রোগে। এই কষ্টের মাঝেও একটু সুখ পেতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রেমে পড়ে আরেক এক কুষ্ঠরোগী জ্যোতিষ চাকমার। ১৯৯৯ সালে তাকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন স্বপ্না।

পরবর্তীতে ডাক্তারদের পরামর্শে ২০০৪ সালে দুই পা কেটে ফেলতে হয় তার। এর পরেও হার মানে নি স্বপ্না। সুখে- শান্তিতেই জীবন কাটতে ছিলো তাদের। এর মধ্যে গত ১১ এপ্রিল সকলকে অকুল সাগরে ভাসিয়ে পরপারের বাসিন্দা হন তাঁর স্বামী জ্যোতিষ চাকমা। চোখে সর্ষে ফুল দেখার মতো অবস্থা তার। স্বামী হারা ও দুই পা হারানো স্বপ্না থবুও থেমে থাকে নি। প্রতিদিন রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে  হুইল চেয়ারে বসে কিছু শাকসবজী নিয়ে বিক্রি করতে বসেন রাঙ্গুনিয়া লিচুবাগান বাজারে।

স্বপ্নার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে আকাশ চাকমা ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে এখন বাসের হেলপারের কাজ করে আর মেয়ে পূর্নিমা চাকমা চন্দ্রঘোনা বি এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ছে। প্রতিদিন হুইল চেয়ারে করে কাপ্তাই সড়কের বনগ্রাম এলাকায় কাঁচা শাকসবজী নিয়ে বিক্রি করে জীবন ধারণ করছে তারা।

স্বপ্না চাকমার সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিদিন রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কাপ্তাই সড়কের লিচুবাগান বনগ্রাম মুল রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করতে বসি। কোনদিন ৫০০ কোনদিন ৩০০ আবার কোনদিন ২০০ টাকা বিক্রি হয় তার। এদিকে করোনা ভাইরাসের কারনে তার ছেলে হয়ে পড়ে কর্মহীন। বাজারে আগের মতো ক্রেতা নেই। এইভাবে খুব অর্থকষ্টে ২ ছেলেমেয়েদের নিয়ে জীবনের কারনে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি।

কথা হয় বনগ্রাম এলাকার ঔষধ ব্যবসায়ী রতন কুমার নাথের সাথে, তিনি জানান প্রতিদিন এই মহিলা হুইল চেয়ারে করে তার দোকানের সামনে বসে তরিতরকারি বিক্রি করেন। কোনদিন কম কোনদিন বেশী বিক্রি হয় তার।

স্বপ্না চাকমা থেকে প্রতিদিন সবজি কিনেন বনগ্রাম হাফেজ পাড়ার অনেক বাসিন্দা জানান, সবজি বিক্রেতা স্বপ্না কখনো বেশী দাম নেন না, খুব সৎ ভাবে চলতে চেষ্টা করেন তিনি। তারা জানান শত দুঃখের মাঝেও সে হাসিমুখে থাকতে চেষ্টা করেন।

দুই পা হারানো স্বপ্না হয়তো ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতে পারতো, কিন্ত যতক্ষণ  দুটি আছে হাত এটাকে কাজে লাগিয়ে ছেলেমেয়েদের মানুষ করবেন এমন স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

আনন্দবাজার/শহক/অম

সংবাদটি শেয়ার করুন