নীলফামারীর সৈয়দপুরে তিনটি ইটভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে ও কালো ধোঁয়ায় প্রায় ৫০ একর জমির ইরি-বোরো ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরাা সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সৈয়দপুর উপজেলার চার নম্বর বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের পাশে ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে তিনটি ইটভাটা। এ সব ইটভাটা হচ্ছে আলহাজ্ব মনছুর আলী সরকারের এমএএস ব্রিকস ও তাঁর ছোট ছেলে আনিছুর রহমান সরকারের এআরএস ব্রিকস্ এবং মোস্তফা ফিরোজের এমবিএস ব্রিকস্।
ইটভাটার আশপাশের জমির ৫০ একর জমির উঠতি ইরি-বোরা ধান পুরোপুরি পুড়ে বিবর্ণ ও কালো হয়ে গেছে। কৃষকরা অভিযোগ করেন গত ২৪ এপ্রিল থেকে গত ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ওই ধানক্ষেতগুলো পুড়ে যায়। আর ক্রমান্বয়ে এর আশপাশের ক্ষেতগুলো পুড়ে বিবর্ণ ও কালচে হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে ধানক্ষেত পুড়ে যাওয়ায় কৃষকদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধানক্ষেতগুলো পুড়ে বিবর্ণ ও কালো হয়ে গেছে। ইউনিয়নের মাঝাপাড়ার কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক (৩৫) বলেন, অন্যের কাছ থেকে ৪৫ শতক জমি বর্গা নিয়েছিলাম। এছাড়াও জমি আবাদে ৭/৮ হাজার টাকা ব্যয়ও হয়েছে। এখন ইটভাটার ধোঁয়ায় পুরো ফসল পুড়ে গেছে। এখন আমি কি করবো তা বুঝে উঠতে পারছিনা।
ইউনিয়নের তেলিপাড়ার অপর কৃষক আব্দুল মান্নান (৫৮) বলেন, তিনি তাঁর নিজের ৩৬ শতক জমিতে বিআর-২৮ জাতের ধান লাগিয়েছেন। তারও পুরো ক্ষেত ভাটার নির্গত কালো ধোঁয়া পুড়ে গেছে। একই অবস্থা এলাকার সরকারপাড়ার কৃষক আইয়ুব আলী সরকার, আব্দুল মালেক,বাবুল হোসেন, বিপুল চন্দ্র রায়,মোজাহার হোসেন, ধীরেন চন্দ্র রায়, সামিউল বশির, জিয়াউল হক বাবুসহ আরও অনেক কৃষকেরই।
এ ব্যাপারে জানতে এমএএস ব্রিকসের স্বত্তাধিকারী আলহাজ্ব মনছুর আলী সরকারকে তাঁর ইটভাটায় গিয়ে পাওয়া যায়নি।
তবে এমবিএস ব্রিকসের স্বত্ত্বাধিকারী মোস্তফা ফিরোজ বলেন, আমার ইটভাটার ধোঁয়া ওই সব জমির ইরি-বোরা ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। আমার ইটভাটায় ইট পোঁড়ানো কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহিনা বেগম জানান, এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আসলে ইটভাটার ধোঁয়ায় নাকি অন্য কোন কারণে ওই সব ইরিবোরো ধান ক্ষেত পুঁড়ে গেছে তা নিয়ে আমার বিভাগের সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তাদের কাজ শেষে আমরা তদন্ত প্রতিবেদনসহ ক্ষতিগ্রস্থ জমি ও কৃষকদের তালিকা তৈরি করে ইউএনও বরাবরে দাখিল করব।পরবর্তীতে ইউএনও মহোদয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিম আহমেদ ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনার বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। তদন্তে ইটভাটার কারণে ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে থাকলে ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
আনন্দবাজার/এফআইবি