সম্প্রতি কৃষকদের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সেই প্রণোদনায় ঋণ পেতে কৃষককে গুণতে হবে ৪% সুদ। অথচ, শিল্পখাতে সরকারি প্রণোদনায় ২% সুদহার আরোপ করেছে সরকার। এমন অবস্থায় দেশের অতিদরিদ্র কৃষক সমাজের জন্য এই প্রণোদনায় সুদের হার ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক, খানি-বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) এক সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য জানায় খানি। পাশাপাশি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় ৭ দফা দাবি পেশ করেছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনার আগ্রাসন থেকে রেহাই পায়নি কৃষিখাতও। পরিবহন লকডাউন এবং আঞ্চলিক লকডাউনেরকারণে পণ্যবাজার সংকুচিত হয়েছে, কৃষকরা উত্পাদিত ফসল বিক্রি করতে পারছে না আবার উপকরণ সরবরাহে অপ্রতুলতায় আগামিতে উৎপাদন কমে আসারও শঙ্কা রয়েছে। তাতে আসছে দিনগুলোতে দেশে খাদ্য সঙ্কট দেখা দেওয়ার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে। গত ৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসকদের সাথে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে করোনা প্রভাব, এতে ব্যাপকভাবে খাদ্যাভাব দেখা দেবে বিশ্বব্যাপী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল, সে রকম অবস্থা হতে পারে।‘ এই প্রেক্ষাপটে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে কৃষিখাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে “কৃষিখাতে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কীম” প্রণোদনায় ৪% সুদের হারকে আমরা অত্যন্ত চড়া ও অসম বলে মনে করছি। একই সাথে আমরা মনে করি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের ঋণসহায়তার নয়, বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের ক্ষতিপূরণ ও নগদ মূলধন সহায়তা দিতে হবে। আর প্রাতিষ্ঠানিক কৃষির জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনায় সুদের হার কমিয়ে ২% করতে হবে।
খানির ৭ দফা দাবিসমূহগুলো হলো-
১। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রণোদনা : সরকারঘোষিত প্রণোদনাটি মূলত: প্রাতিষ্ঠানিক কৃষকদের সহায়তা করতে। কিন্তু প্রচলতি ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই প্রণোদনা থেকে বর্গাচাষী করেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষি কাজ করেন এবং কৃষিসমন্ধীয় কাজ করেন এমন কৃষকরা কোন সহয়তা পাবেন না। সুতরাং, তাদের জন্য কোন ধরণের সুদ ছাড়াই খানাভিত্তিক আয় ধরে নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে।
২। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মূলধন সহায়তা : করোনাভাইরাসজনিত কারণে পরিবহণ ও সাধারণ বাজারঘাট বন্ধ থাকায় কৃষকের সবজি এবং তরমুজ মাঠেই নষ্ট হয়ে যাবার ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকরা তাদের মূলধন হারিয়েছে। সরকারিভাবে এইসকল ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করে ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে মূলধন যোগান দিত হবে।
৩। হাওরাঞ্চলে ধান কাটার জন্য শ্রমিক ও করোনা নিরাপত্তা : হাওরাঞ্চলে ধান কাটার শ্রমিক যোগান দেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাপূর্বক ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ প্রদান করা এবং দেশের অভ্যন্তরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের গমনাগমন নিশ্চিত করা। শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে কোনভাবে অসুস্থ হয়ে গেলে দ্রুত চিকিত্সা পাওয়া জন্য ‘কৃষিশ্রমিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা’ প্রণোদনা তহবিল গঠন করতে হবে।
৪। মাঠ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ : যেহেতু এ মুহূর্তে পরিবহন এবং শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে; তাই করোনাভাইরাসের বিস্তার ও সংক্রমণ রোধ করতে এবং কৃষকের হয়রানি কমাতে এই বোরা মৌসুমে সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ করতে হবে।
৫। সরকারিভাবে ২৫ লাখ মেট্রিকটন ধান/চাল ক্রয় করা : সরকারিভাবে এই বছর ১৯ লাখ মেট্রিক টন ধানচাল ক্রয় করার কথা বলা হয়েছে, যা মোট উত্পাদনের মাত্র ১০ শতাংশ। সরকারিভাবে সকল গুদাম ব্যবহার নিশ্চিত করে ২৫ লাখ মেট্রিকটন ধানচাল ক্রয় করতে হবে; সেই সাথে মশুর, আলু ইত্যাদি ফসল ক্রয়ের সীমা বৃদ্ধি করতে হবে।
৬। ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য ডিজেলে নগদ সহায়তা : যেহেতু গত মার্চে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৬০ শতাংশ কম। দেশের ফসলের সবচেয়ে বড় এই মৌসুমে মাঠে আলু, সবজি ও শর্ষে রয়েছে, যেগুলোতে সেচ দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্র ক্ষুদ্র কৃষকদের যারা নিজেরাই শ্যালো মেশিনে ইরিগেশন করে, তাঁদেরও ডিজেল ক্রয়ের জন্য জরুরিভাবে নগদ সহায়তা দিতে হবে।
৭। দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামারী ও মৎস্যজীবীদের জীবিকায়ন ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল : লকডাউনের কারণে সঙ্কটে পড়েছে দুগ্ধ খামারিরা ও পোল্টি খামারীরা। এক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে হিসেবে চালের সঙ্গে আলু, গম, ডিম ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি: করোনাকালীন সময়ে দুগ্ধ ও ব্রয়লার খামার পরিচালনার জন্য এককালীন নগদ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদান করতে হবে। একই সাথে এই সময়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে; যারা নিজেদর দায়িত্ব মাছ ধরছে- তারাও বরফকল বন্ধ থাকা এবং পরিবহন না থাকায় সঙ্কটে পড়ছে। এই অবস্থায়, মৎস্যজীবীদের জন্য তালিকা তৈরি করে জীবিকায়ন সহায়তা প্রদান করতে হবে।
আনন্দবাজার/শাহী