ঢাকা | মঙ্গলবার
১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোক্তা নয় সরবরাহকারী দিবে ভ্যাট

মোবাইল ব্যাংকিং র্বতমানে আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিং এর গ্রাহকসংখ্যা। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ সেবাকে গ্রহন করেছে। ফলে সব ব্যাংকই মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা চালু করছে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ভোক্তাকে কোনো ভ্যাট (মূসক) দিতে হবে না।  ভ্যাট দিতে হবে সেবা প্রদান বা সরবরাহকারীকে।

কেন্দ্রীয় মূসক নিবন্ধন নিতে হবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারীকে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে এসএমএস সেবা আদান-প্রদান করা হয়। সিমকার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে এ সেবা প্রদান করায় সেবা প্রদানকারীকে মূসকের পাশাপাশি সম্পূরক শুল্কও প্রদান করতে হবে। সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রে প্রাপ্য পণ্যের বিপরীতে মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আদায় পদ্ধতি ২০২০ বিষয়ক আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ এবং ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬’-এর বিধি ১১৮ক-এ ক্ষমতাবলে এ আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশে মোবাইল ব্যাংকিং সংখ্যা, প্রযোজ্যতা, কেন্দ্রীয় নিবন্ধন, মূসক নিরূপণ ও পরিশোধ, দাখিলপত্র প্রদান, হিসাব সংরক্ষণ , জরিমানা এবং দণ্ড বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) আইন, ২০১৮-এর আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ ডাকবিভাগ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারীকে।আর নিতে হবে কেন্দ্রীয় মূসক নিবন্ধন । কেন্দ্রীয় নিবন্ধনে এ সেবা প্রদানে সহযোগী এজেন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর, কাস্টমার অ্যাকুইজিশন এজেন্সি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এজেন্ট, ডিস্ট্রিবিউটর, কাস্টমার অ্যাকুইজিশন এজেন্সির সব তথ্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারীর সফটওয়্যারে সংরক্ষিত থাকবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্থকে পণ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আইনের ৩২ ধারা অনুযায়ী করযোগ্য এ সেবা সরবরাহের বিপরীতে প্রাপ্ত পণ্য হতে কর ভগ্নাংশের সমপরিমাণ অর্থ বিয়োগ করে মূসক প্রদান করতে হবে, এমনটাই বলা হয় আদেশে।

আদেশে আরো বলা হয়, প্রত্যেক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারীকে অনলাইনে হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। অনলাইনে কর চালান ইস্যু করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ইস্যু করা এসএমএস বা অনলাইন নোটিফিকেশন করচালান হিসেবে গণ্য হবে। চালানে প্রত্যেক লেনদেনের বিপরীতে লেনদেন নম্বর থাকবে। লেনদেনের সব তথ্য এনবিআর কর্তৃক ইস্যু করা সফটওয়্যারে সংরক্ষিত থাকবে। এ সফটওয়্যারে মূসক কর্মকর্তারদের তদারকির জন্য প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সেবা সরবরাহকারীকে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকে ১৫ শতাংশ হারে মূসক পরিশোধ করতে হবে। সহযোগী বা এজেন্টকে সেবা সরবরাহের উপর পুনরায় মূসক দিতে হবে না। সহযোগী বা এজেন্টকে ব্যাংক, ডাকবিভাগ থেকে মূসক পরিশোধের সপক্ষে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। সহযোগী বা এজেন্টকে দাখিলপত্রের সাথে প্রমাণ হিসেবে প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করতে হবে। ক্যাশ ইন, আউটের ক্ষেত্রে যে চার্জ বা কমিশনের মধ্যে এ মূসক অর্ন্তভুক্ত থাকবে। ফলে ব্যাংক, ডাকবিভাগ ও মোবাইল অপারেটরকে এ মূসক পরিশোধ করতে হবে না।

এছাড়াও বলা হয়, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মোবাইলের এসএমএস আদান-প্রদানের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এসএমএস প্রদানে সিমকার্ড ব্যবহার করা হয় বলে সেবাপ্রদানকারীকে সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হবে। দাখিলপত্র, দলিলাদি ও অন্যান্য রেকর্ড সেবা প্রদানকারীকে পাঁচ বছর সংরক্ষণ করতে হবে। আইন লঙ্ঘন করা হলে আইনের ৮৫ ধারা অনুযায়ী জরিমানা আরোপ করা হবে। অপরাধ করলে আইনের পাশাপাশি ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী দণ্ড প্রদান করা হবে।

দেশে বিকাশ, শিউর ক্যাশ, রকেট, ইউক্যাশসহ ১৬টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে। এছাড়া ডাকবিভাগ নগদ নামে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে। দেশে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবধারীর সংখ্যা সাত লাখ ৯৬ লাখ ৫৫ হাজার, যার মধ্যে সচল রয়েছে তিন কোটি ৪৭ লাখ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা ৯ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫৫ জন। ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

আনন্দবাজার/টি.এস

সংবাদটি শেয়ার করুন