চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে দাপট দেখাচ্ছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। তারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে। বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো সব চীননির্ভর। কিন্তু এখন চীনাদের সুদিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এক-দেশ নির্ভরশীলতা ব্যবসার জন্য কতটা ক্ষতিকর তা করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সারা বিশ্ব বুঝে গিয়েছে।
গত দু’মাসে সবচেয়ে বড় আঘাতটা এসেছে চীনের ওপরই। এর প্রধান কাজ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। যুক্তরাষ্ট্রও বুঝতে পারছে এর উত্তাপ। প্রায় আট শতাংশ পড়ে গেছে দেশটির এস অ্যান্ড পি ৫০০-এর সূচক। বিশ্বের শেয়ারবাজারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থা। কয়েকগুণ বেশি করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরেও ইতালির শেয়ারবাজারেও এত বড় ধস নামেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে চীনের অর্থনীতিতে এই ধসে লাভবান হতে পারে মেক্সিকো।
করোনা সংকটে ব্যবসায়িকভাবে চীনের যতটা না ক্ষতি হচ্ছে তার থেকে বেশি লাভবান হচ্ছে মেক্সিকো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগের বছর যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তিকে (ইউএসএমসিএ) আইনে পরিণত করেছেন। যার ফলে সবচেয়ে বেশি লাভ হচ্ছে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোরই।
বিপুল সংখ্যক প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কিছু অংশ অন্য দেশ থেকে মেক্সিকোতে সরিয়ে নিয়েছে বা নিচ্ছে। বাণিজ্য যুদ্ধ ও ইউএসএমসিএ পাস হওয়ার কারণে এসব হচ্ছে।
এক বছরে মেক্সিকোতে আসা সম্ভাব্য সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দাঁড়াতে পারে ১২ বিলিয়ন থেকে ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উৎপাদনখাতে বিদেশি বিনিয়োগ কয়েকগুণ বাড়ায় মেক্সিকোর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধে লাভবান হওয়ার দিক থেকে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। আছে ২৫ বছর আগে করা নাফটা চুক্তিও। এর মধ্যেই বিশ্বের অন্যতম গাড়ি, ইলেক্ট্রনিক্স, টেলিভিশন ও কম্পিউটার উৎপাদক এবং রফতানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে মেক্সিকো। বেইজিং থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জাহাজে পণ্য পৌঁছাতে সময় লাগে ৪০ দিন কিন্তু মেক্সিকো থেকে নিউইয়র্ক যেতে সময় লাগে মাত্র পাঁচদিন। সময় কম লাগার কারণেও মেক্সিকোর দিকে ঝুঁকছে যুক্তরাষ্ট্র।
মেক্সিকো এখন বিমানের ইঞ্জিন ও মাইক্রো সেমিকন্ডাক্টরের মতো জটিল যন্ত্রাংশও তৈরি করা শুরু করেছে। বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী দেশ মেক্সিকো। এখন অসংখ্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মেক্সিকোতে বিনিয়োগ করছে। বিশ্বখ্যাত জেনারেল ইলেক্ট্রিক, বোয়িং ও কিয়া এর মত প্রতিষ্ঠান গুলো বিনিয়োগ করেছে মেক্সিকোতে।
আনন্দবাজার/এস.কে