ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় অঙ্কের ঋণ দেয়ার প্রবণতায় ঝুঁকির মুখে ব্যাংকগুলো

ব্যাংকগুলোর বড় অঙ্কের ঋণ দেয়ার প্রবণতা তৈরি করেছে বড় ঝুঁকির সম্ভাবনা। নির্দিষ্ট কিছু খাত এবং গ্রুপের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এমনই এক অবস্থার মধ্যে দেশের ব্যাংক খাত নিয়ে উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

শীর্ষ তিন ঋণ গ্রাহক খেলাপি হলেই মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে দেশের ২১টি ব্যাংক। দেশের মোট ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে মোট খেলাপি ঋণের ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ রয়েছে ১০টি ব্যাংকের কাছে। এই ১০টি ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটির খেলাপি ঋণই সাড়ে ৪৭ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ আর্থিক স্থিতিশীলতা পর্যালোচনা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১টি ব্যাংকের তিনজন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে ব্যাংকগুলো। ৭ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন শীর্ষ গ্রাহক খেলাপি হলে ঘাটতিতে পড়বে ৩৭টি ব্যাংকের মূলধন।

সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যার মধ্যে অবলোপন বাদ দিয়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০১৮ এর একই সময়ের খেলাপি ঋণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, সে হিসেবে বছর ঘুরতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা।

খেলাপি ঋণের বেশিরভাগই রয়েছে আদায় অযোগ্য কু-ঋণ এর পর্যায়ে। মোট ঋণের ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ রয়েছে আদায় অযোগ্য, মন্দ বা ক্ষতিজনক পর্যায়ে।

এদিকে ব্যাংকগুলোর সম্পদের বিপরীতে কমেছে আয়ের পরিমাণ। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর মূলধনের বিপরীতে আয় বা রিটার্ন অন ইক্যুইটি (আরওই) দাঁড়িয়েছে ঋণাত্বক ১ দশমিক ৯ শতাংশে। তিন মাস আগেও (এপ্রিল-জুন প্রান্তিক) যা ছিল ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঝুঁকি জেনেও বড় ঋণে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। প্রভাবশালীদের চাপ ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের বড় ঋণ দেয়ার মন-মানসিকতা থেকে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এছাড়া বড় ঋণ প্রদানে সময় কম ও অনিয়ম দুর্নীতির সুযোগ বেশি থাকে, তাই তারা এসব ঋণ বেশি দেয়। এতে করে ব্যাংকগুলো গুটিকয়েক ঋণগ্রহীতার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ফলে ঋণের সুষম বণ্টন হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, এখন ব্যাংকিং খাতে বড় সমস্যা সুশাসনের অভাব। সুশাসনের ঘাটতি মেটাতে পারলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যাবে। অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যাংকার, গ্রাহক ও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে।

আনন্দবাজার/ডব্লিউ এস

সংবাদটি শেয়ার করুন