বাগেরহাটের যুবক আকাশ মণ্ডল তার পরিচয় গোপন করে ‘ইরফান’ নামে কেন জাহাজে চাকরি নিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় কার্গো জাহাজ এমভি আল বাখেরার মালিকও চিন্তিত। গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ইরফান অভিযোগ করেছেন, তাকে বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তবে এসব অভিযোগ বানোয়াট বলে দাবি করেছেন জাহাজের মালিক।
চাঁদপুরের মেঘনায় সংঘটিত ৭ খুনের মামলার আসামি আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। তাকে চাঁদপুর সদর মডেল থানার হাজতখানায় রাখা হয়েছে এবং নেওয়া হয়েছে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার আওতায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নৌ পুলিশের মো. কালাম খান তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। গতকাল বুধবার চাঁদপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নম্বর আদালতের বিচারক মুহাম্মদ ফারহান সাদিক ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মঙ্গলবার মধ্যরাতে র্যাব-১১ এর বিশেষ একটি দল চট্টগ্রামের চিতলমারি থেকে আত্মগোপনে থাকা ইরফানকে গ্রেপ্তার করে। তার প্রকৃত নাম আকাশ মণ্ডল, পিতা জগদীশ মণ্ডল। তাদের বাড়ি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায়।
কার্গো জাহাজ এমভি বাখেরার মালিক মাহবুব মোর্শেদ ডাবলু জানান, ইরফান নামে পরিচয় দিয়ে আকাশ মণ্ডল তার জাহাজে খালাসির পদে চাকরি নেন।
তিনি আরও বলেন, কেন এবং কী কারণে সে প্রকৃত নাম গোপন করেছিল, তা আমাদের কাছেও অজানা।
গতকাল আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান বিচারককে বলেন, মানুষ ভুল করে। আমিও ভুল করেছি।
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম জানান, ইরফান আদালতে স্বীকার করেছেন যে তিনি ৭ জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছেন। নিহতরা হলেন জাহাজের মাস্টার ফরিদপুর সদরের গোলাম কিবরিয়া (৬৫), একই এলাকার শেখ সবুজ (২৭), নড়াইলের মো. সালাহউদ্দিন (৪০), আমিনুর মুন্সি (৪১), মাগুরার সজিবুল ইসলাম (২৯), কিশোর মাজেদুল (১৬) এবং মুন্সিগঞ্জের রানা (২৮)।
নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হাসিবুল আহসান জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মাথা ও মুখমণ্ডলে গুরুতর আঘাত করেই তাদের হত্যা করা হয়।
ঘটনার পরপরই জাহাজের মালিক অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার সময় চট্টগ্রাম থেকে সার বোঝাই করে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি যাচ্ছিল এমভি আল বাখেরা। মালিক পক্ষ জাহাজটি গন্তব্যে পৌঁছে দিতে আদালতের অনুমতি চেয়েছে।
এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত করছে সিআইডি ও পিবিআই। পাশাপাশি শিল্প মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটিও কাজ করছে।