মধ্যরাতে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে ফায়ার সার্ভিসকে। ফলে ১৯ ইউনিট দীর্ঘ ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা ৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। সেই সঙ্গে আগুন নেভাতে কাজ করে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা।
তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগে আরও প্রায় ৪ ঘণ্টা। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সচিবালয়ে লাগা আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের একাধিক সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে তাদের নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি সচিবালয়ের ফটক দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ভেতরে নিতেও বেশ বেগ পেতে হয় তাদের।
তাদের ভাষ্য, ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও ফায়ার সার্ভিসের মাত্র দুটি টার্নটেবল লেডার (টিটিএল) ভেতরে ঢুকতে পেরেছে। আরও বেশি টিটিএল ভেতরে ঢুকতে পারলে আরও আগেই আগুন নেভানো সম্ভব হতো।
কর্মকর্তারা বলেন, আগুন ছড়িয়ে পড়ার একটি বড় কারণ হলো, মন্ত্রণালয়গুলো কাঠ দিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করেছে। এটি যখন করা হয়, তখন নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু কাঠ দিয়েই সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি রুম ছিল বন্ধ। তালা ভেঙে, জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকতে হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সচিবালয়ে প্রবেশের মোট পাঁচটি ফটক রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র দুটি ফটক দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকার সুযোগ রয়েছে। তবে এই দুই ফটক দিয়েও ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়ি ঢুকতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, সচিবালয়ের ৪ নম্বর ফটক দিয়ে ঢুকতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ভেঙে গেছে।
অন্যদিকে আগুন নেভানোর কাজ শেষে সচিবালয় থেকে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি বের করতেও বেশ সমস্যা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এ সময় দেয়ালের কয়েকটি জায়গাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে সচিবালয়ে প্রবেশের ফটক সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছিল। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় পুরো ভবনের চারপাশ ঘুরে দেখেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ছাড়াও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদসহ অন্যরা। ওই সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানোর সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে গণপূর্ত সচিব হামিদুর রহমান খান বলেন, ৬ নম্বর ভবনের সামনের চলন্ত করিডর ভেঙে দেয়া হবে।
অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আগুনের ঘটনায় অফিসের নথিপত্র ছাড়াও কম্পিউটার, আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলে শুনেছেন তিনি। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কমিটি গঠনের কথাও জানান তিনি।
বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) দিবাগত মধ্যরাত ১টা ৫২ মিনিটের দিকে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এর কয়েক মিনিটের মাথায় আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে ১৯ ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। একপর্যায়ে ৬ ঘণ্টার বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে আগুন নেভানোর সময় ট্রাকচাপায় আহত হওয়ার পর মো. সোহানুজ্জামান নয়ন নামে এক ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে। তিনি তেজগাঁও ফায়ার টিমের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সদস্য ছিলেন।
অন্যদিকে সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, তিনি ধারণা করছেন, বাজেটের এক্সেল শিটগুলো ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। দপ্তরে তার ব্যক্তিগত সার্টিফিকেট ছিল, তা আর ফিরে পাবেন না তিনি। প্রশাসন শাখার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ধ্বংস হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
সচিবালয়ে কর্মরত এক কর্মচারী তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোনে বলছিলেন, ‘স্যার, সব শেষ হয়ে গেল।’